Dashanan Ravan is worshiped in this village: রামায়ণ ও মহাভারত প্রত্যেকটা ভারতীয়র সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। রামায়ণের অন্যতম মুখ্য চরিত্র হলো রাবণ, যাকে আমরা দশানন নামেও চিনি। পুরানি কথিত আছে যে, রাবণ ছিলেন পালকপিতা ব্রহ্মার প্রপৌত্র ও শিবের একনিষ্ঠ ভক্ত। কিন্তু সাধারন মানুষের কাছে রাবণ হলো অশুভ প্রতীক। রামায়ণে আমরা দেখতে পাই মা সীতাকে অপহরণ করার শাস্তি রাবণকে পেতে হয়েছিল। রাবণের (Ravana) চরিত্রটি যথেষ্ট বুদ্ধিমান এবং দক্ষ শাসক।
হিন্দু ধর্মে বিজয়া দশমী কিংবা দশেরা দুটোই খুব জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয়। একদিকে যেমন আছে বিষাদের সুর অন্যদিকে রয়েছে অশুভ শক্তির দমন। একদিকে দেবী দুর্গার প্রতিমা নিরঞ্জনে বহু মানুষের সমাগম ঘটে আবার অন্যদিকে রাবণের কুশপুত্তলিকার পুড়িয়ে অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির জয়ের উৎসবে বহু মানুষ একত্রিত হন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো ভারতের বহু জায়গায় এমন আছে যেখানে রাবণকে (Ravana) পুজো করা হয় ভগবান হিসাবে।
সাধারণ মানুষের মুখে নিত্যদিন রাম নাম শোনা যায় কিন্তু রাবণের নাম কজনের মুখে শুনেছেন? জন্মের পর কারো নাম রাবণ রাখা হয়েছে সেটা অসাধারণ হতো শোনা যায় না। কিন্তু একেবারে অন্য দুনিয়াতে বিরাজ করে নাগপুরের আকোলা জেলার সাঙ্গোলা গ্রামের বাসিন্দারা। সেখানকার জেলা পরিষদের এক স্কুলের শিক্ষক যার নাম রাবণ মাদানে। তিনি অবশ্য তাঁর নাম নিয়ে যথেষ্ট গর্বিত। আকোলা জেলার সাঙ্গোলার বাসিন্দাদের কাছে রাবণ নামটি অশুভ নয়, বরং শুভ। এখানে বাচ্চাদের নামকরণ করা হয় রাবণের নামেই। তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রাবণের (Ravana) পূজা করে আসছে।
এছাড়া ভারতের দক্ষিণে অনেকেই রাবণকে (Ravana) দেবতার রূপে পূজা করে। সাঙ্গোলাতে ১৫০০ জন বাস করেন এবং এই গ্রামেই রাবণের একটি দশমুখী, পাঁচ ফুট লম্বা পাথরের মূর্তি আছে। এখানে রাবণকে দশেরা উৎসব ও প্রতি শুনিবার ধূমধাম করে পুজো করা হয়। এখনকার বাসিন্দাদের বিশ্বাস যে রাবণ হলেন একজন মহান রাজা, পণ্ডিত, যোদ্ধা ও শিল্পী। মন্দের মাঝেও তার ভালো দিকটিকে তারা পুজো করেন। এই গ্রামের পূর্ব পুরুষদের কাছে এক হলো শোনা যায় যে, প্রায় ৩৫০ বছর আগে এই গ্রামে এক ঋষি বাস করতেন। তাঁর মৃত্যুতে গ্রামবাসীরা তাঁর মূর্তি তৈরি করে পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেই সময় ভুল করে রাবণের মূর্তি তৈরি করে ফেলেন শিল্পী। প্রথমে গ্রামবাসীরা রাবণকে পুজো করতে রাজি না হলেও শিল্পীর থেকে রাবণের মূর্তি নিয়ে আসার জন্য স্বপ্নাদেশ পান তাঁরা। গরুর গাড়িতে করে মূর্তিটিকে নিয়ে আসার সময় সীমান্তের কাছে গরুগুলি বেগোরবাই করে। কিছুতেই গ্রামের মধ্যে আনতে না পেরে গ্রামবাসীরা গ্রামের সীমানায় মূর্তিটিকে প্রতিষ্ঠা করে পূজা শুরু করেন।
মহারাষ্ট্রের এই গ্রামের বাসিন্দারা অন্য কোনও উৎসব উদযাপন করেন না। তারা দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য আলাদাভাবে কোন নিয়ম নীতি মানে না। তবুও তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস রাবণ তাঁদের প্রার্থনায় সাড়া দেন। নিঃসন্তান দম্পতিরা রাবণের কাছে পুত্র সন্তানের জন্য আশীর্বাদ চাইলে তিনি তা পূরণ করেন। আশা পূরণ হলে গ্রামবাসীরা নিজেদের পুত্র সন্তানের নাম রাবণের নামে রাখে।