নিজস্ব প্রতিবেদন : টাটা ন্যানো (Tata Nano) গাড়িকে বলা হয় রতন টাটার (Ratan Tata) স্বপ্নের গাড়ি। স্বপ্নের গাড়ি বলার পিছনে যে গল্প শোনা যায় তা হল, তিনি চাইতেন যেন দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে এই গাড়ি পৌঁছে দেওয়া যায়। শোনা যায়, একদিন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় রতন টাটা দেখতে পান, একটি পরিবারের সদস্যরা বৃষ্টিতে ভিজে দু’চাকা চড়ে যাচ্ছিলেন। এই ঘটনা দেখে তার মনে কষ্ট হয় এবং তারপরেই তিনি সস্তায় চার চাকা তৈরীর জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সেই থেকেই টাটা ন্যানোর জন্ম।
পরবর্তীতে টাটা ন্যানো গাড়ি তৈরি করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের হুগলির সিঙ্গুরকে বেছে নেওয়া হয়। যেখানেই কারখানা তৈরি করার জন্য ৯৯৭ একর জমির অধিগ্রহণ করেছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। কিন্তু এর মধ্যে ৪০০ একর জমির জমিদাতারা ছিলেন অনিচ্ছুক। সেই সকল অনিচ্ছুক জমিদাতাদের উপেক্ষা করেই তৎকালীন রাজ্য সরকার টাটাকে জমি হস্তান্তর করে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই আন্দোলনে নেমেছিল তৃণমূল।
২০০৬ সালের ১৮ মে সিঙ্গুরে রতন টাটা টাটা ন্যানো কারখানা ঘোষণা করার পর ২৫ মে থেকে শুরু হয় আন্দোলন। এই আন্দোলনে নেমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রান্ত হতে হয়েছিল। এরপর ২০০৬ সালে ৩ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধর্মতলা মোড়ে টানা ২৬ দিন অবস্থান অনশন বিক্ষোভ করেছিলেন তিনি। তবে টাটা গোষ্ঠী নিজেদের কাজ চালাতে শুরু করে এবং ২০০৭ সালের ৯ মার্চ জমি টাটাদের হাতে হস্তান্তর করে দেওয়ার পর আন্দোলন আবারও জোরদার হয়। এই সময়কালের মাঝেও ঘটে গিয়েছে একাধিক ঘটনা যেগুলি রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল।
রাজনৈতিক এই সকল একাধিক আন্দোলন এবং টানাপোড়েনের কারণে টাটা মোটর্স (Tata Motors) শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সিঙ্গুরে কারখানা নির্মাণের কাজ স্থগিত করে এবং ৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে কারখানা সরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ৭ অক্টোবর সেই কারখানা ছড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মোদির গুজরাতে। রতন টাটা কারখানা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময় মন্তব্য করতে গিয়ে মমতাকে ‘ব্যাড এম’ এবং মোদিকে ‘গুড এম’-ও বলেছিলেন।
সিঙ্গুরে যে সময় টাটা ন্যানো গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল সেই সময় এই গাড়ির দাম রাখা হয়েছিল মাত্র এক লক্ষ টাকা। কেননা সিঙ্গুর নিয়ে যখন রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে ঠিক সেই সময়ই ২০০৮ সালের ১০ জানুয়ারি টাটা মোটরস দিল্লিতে টাটা ন্যানো গাড়ির আত্মপ্রকাশ করেছিল। যে সময় দাম জানানো হয়েছিল এক লক্ষ টাকা এবং তখনকার টাকার মূল্য হিসাবে পড়তো ১৩০০ মার্কিন ডলার। তবে শোনা যায়, সিঙ্গুর থেকে কারখানা গুজরাটে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সহ অন্যান্য বিভিন্ন কারণে পরবর্তীতে এই টাটা ন্যানো গাড়ির দাম হুহু করে বাড়তে শুরু করে। এমনকি অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ২০১৭ সালে এই গাড়িটির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা।