নিজস্ব প্রতিবেদন : গত ৩১ মার্চ ঝড়ের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা। যে ঘটনায় পাঁচ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি গৃহহীন শতাধিক মানুষ। হাওয়া অফিসের তরফ থেকে এই ঝড়কে সাধারণ আর পাঁচটা ঝড়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়নি। বরং একে মিনি টর্নেডো (Mini Tornado) আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে জলপাইগুড়ি প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার বাংলার বুকে আছড়ে পড়েছে মিনি টর্নেডো। বাংলার বুকে এইভাবে মিনি টর্নেডো আছড়ে পড়ার পিছনে কারণও রয়েছে।
ইতিহাসের দিকে তাকালে যেমন বাংলার বুকে আছড়ে পড়া একাধিক মিনি টর্নেডোর সন্ধান পাওয়া যায়, ঠিক সেই রকমই আবার বাংলার একাধিক জেলা টর্নেডো প্রবণ (Tornado prone area in WB)। অর্থাৎ ঐ সকল জেলাতেও ভবিষ্যতে টর্নেডো আছড়ে পড়তে পারে। যে কারণে এমন ঘটনা দেখলে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে ওই সকল জেলার মানুষদের।
১৯৮৩ সালের ১২ এপ্রিল গাইঘাটায় আছড়ে পড়েছিল ভয়ংকর টর্নেডো। যে সময় এক বৃদ্ধাকে উড়িয়ে গাছের উপর তুলে দিয়েছিল। এরপর আবার ২০০৭ সালে মালদায় আছড়ে পড়েছিল ভয়ঙ্কর গতির টর্নেডো। যে ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ২২ জনের। ২০১৫ সালে একবার টর্নেডো আছড়ে পড়েছিল অশোকনগরে। ফের একবার ২০১৬ সালে টর্নেডো আছড়ে পড়েছিল গাইহাটায়। ২০২১ সালে টর্নেডো আছড়ে পড়েছিল হালিশহরে। ২০২১ সালে টর্নেডো আছড়ে পড়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর দ্বীপে। এছাড়াও যশ ঘূর্ণিঝড়ের পর টর্নেডো আছড়ে পড়েছিল অশোকনগর-গুমায়। এছাড়াও এই ধরনের ঘটনা বাংলার বুকে অনেক উদাহরণ হিসাবে সাক্ষী হয়ে রয়েছে।
এশিয়ায় টর্নেডো একেবারে বিরল ঘটনা হলেও পশ্চিমবঙ্গ ব্যতিক্রম। পশ্চিমবঙ্গ ব্যতিক্রম হওয়ার পিছনে ভৌগোলিক অবস্থান জড়িয়ে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের যে সকল জেলাকে টর্নেডো বা মিনি টর্নেডো প্রবণ মনে করা হয় সেই সকল জেলাগুলি হল উত্তরবঙ্গ, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর। এছাড়াও টর্নেডো প্রবণ এলাকা হিসাবে ধরা হয়ে থাকে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও মালদাকেও।
বিশ্বের সবচেয়ে টর্নেডো প্রবণ এলাকা হিসেবে ধরা হয়ে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাকে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি টর্নেডো সেখানেই আছড়ে পড়ে এবং বছরের যে কোন সময় টর্নেডো আছড়ে পড়তে দেখা যায়। আর এই ফ্লোরিডার যে ভৌগোলিক অবস্থান এবং পরিবেশ তার সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের। কেননা পশ্চিমবঙ্গে যেমন হিমালয়ের শীতল হাওয়া প্রবেশ করে, ঠিক সেই রকমই আবার বঙ্গোপসাগর থেকে বিপুল পরিমাণে জলীয় বাষ্প প্রবেশ করে। আর এসবের কারণেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা টর্নেডো বা মিনি টর্নেডো প্রবণ।