The Jubilee diamond more than twice the size of the Kohinoor that saved the Tata Company: ভারতের নারীবাদীদের অন্যতম মাথা ছিলেন লেডি মেহেরবাই টাটা। তার কাছেই ছিল এই বিশাল আকৃতির হিরে। কোহিনূরের নাম তো সবাই শুনেছেন। কিন্তু কোহিনুরের চেয়েও দ্বিগুণ আয়তন বিশিষ্ট এই হিরেটি। এক সময় টাটা কোম্পানিকে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে ছিল এই হিরেটাই। লেডি মেহেরবাই টাটা কথা কম বলতেন। যা করতেন কাজে করে দেখাতেন। শোনা যায়, টাটা স্টিলকে চরম সংকটের দিনে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছিল লেডি মেহেরবাই টাটা। তখনই এই হিরেটিকে কাজে লাগানো হয়। এটি ১ টি বিশাল আকৃতি জুবিলী হিরে (Jubilee Diamond)।
এই হিরেটি কিন্তু ভারতীয় নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার জাগারফ্রন্টেইন খনি থেকে খুঁজে পাওয়া যায় এই হিরেটিকে। ১৮৯৭ সালে বৃটেনের রানী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসনে বসার ৬০ তম বার্ষিকী উদযাপনের সময় এই বিশাল আকৃতির হিরেটির নামকরণ করা হয় জুবিলী হিরে। ২৪৫.৩৫ ক্যারেট ওজনের এই হিরেটিকে দেখতে অনেকটা কুষাণের মতো। এই জুবলি হিরেটি (Jubilee Diamond) পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহতাকার হিরে হিসেবে পরিচিত। তুলনামূলক কোহিনুরের ওজন অনেকটাই কম। কোহিনূরের ওজন মাত্র ১০৫.৬০২ ক্যারেট। ১৯০০ সালে এই হিরেটিকে ১টি প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করা হয়। সেখানে হিরেটিকে দেখে মুগ্ধ হয় টাটা কোম্পানির (Tata Company) অন্যতম কর্ণধার স্যার দোরাবজি টাটা। তিনি তার স্ত্রীর জন্য উপহার হিসেবে নিয়ে আসেন এই হিরে। তখন এই হিরেটির দাম পড়েছিল মাত্র ১ লক্ষ পাউন্ড।
সেই থেকে এই বিশালাকার হিরেটি (Jubilee Diamond) ভারতের সম্পদ হয়ে ওঠে। এই হিরেটি মূলত টাটা দম্পতির ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত ছিল। ১টি প্লাটিনামের চেনের সাথে হিরেটিকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিধান করতে দেখা গেছে লেডি মেহেরবাই টাটাকে। কিন্তু পরবর্তীতে ভারতের এক বিশাল পরিবর্তনের মূল কান্ডারী হয়ে ওঠে জুবিলি হিরে। ঔপনিবেশিক আধিপত্য চলার সময় ভারতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের আধিপত্য বাড়তে থাকে। আর এই ব্যবসায়ীদের মাথা ছিল টাটা ইন্ডাস্ট্রিজ। ১৯০৩-এ তৈরি করা হয় তাজমহল হোটেল, ১৯০৭ এ তৈরি হয় টাটা স্টিল এবং ১৯১০ সালে তৈরি হয় টাটা পাওয়ার। কিন্তু ১৯২৪ সালে হঠাৎই সমস্যার মুখে পড়তে হয় টাটা স্টিলকে। সেই সময়ে সস্তার জাপানি ইস্পাতের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে টাটা স্টিলের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন ? Tata Nano EV: ইলেকট্রিক ভার্সনে ফিরে আসছে রতন টাটার স্বপ্নের গাড়ি ন্যানো! শুরু জোর জল্পনা
কর্মীদের বেতন দেওয়ার মতো ক্ষমতা ছিল না। মূলধন তো ছিলই না, উপরন্তু বাজারে ধার শোধ করতে হতো প্রায় ২ কোটি টাকা। সহজ উপায় হিসেবে কর্মী ছাঁটাই করতে পারতেন তাঁরা। কিন্তু সংস্থাটি যখন টাটা তখন সাধারণকে বিপদে ফেলতে পারে না তারা। সেই দুর্দিনেও একজন কর্মীকেও ছাটাই করা হয়নি সংস্থা থেকে। বরঞ্চ দোরাবজি এবং লেডি মেহেরবাই টাটা ১টি বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন সেই সময়। লেডি মেহেরবাই তার কিছু গয়নার সাথে বের করে দিয়েছিলেন জুবিলি ডায়মন্ডটিকেও (Jubilee Diamond)। ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ায় অর্থাৎ যেটি বর্তমানে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া নামে পরিচিত সেখানে বন্ধক রাখা হয় এই সমস্ত সম্পদগুলিকে। বিনিময়ে নেওয়া হয় ১কোটি টাকার ঋণ। এরপর খুব শীঘ্রই লাভের মুখ দেখতে শুরু করে টাটা স্টিল। ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে একটি শক্তিশালী জায়গায় পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছিল টাটা ইন্ডাস্ট্রিজ।
বিপদের দিনে একটি গোটা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে কাজে এসেছিল বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম হিরে জুবিলি ডায়মন্ড। তবে এটুকুতেই কিন্তু কাজ শেষ হয়ে যায়নি। দোরাবজি টাটার মৃত্যুর পর একাধিক সম্পত্তির সাথে এই ডায়মন্ডটিকেও বিক্রি করে টাটা চ্যরেটেবল ট্রাস্ট। সেই ট্রাস্টের মাধ্যমে তৈরি করা হয় মেমোরিয়াল হাসপাতাল, সোশ্যাল সায়েন্স এবং ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের জন্য আলাদা ইনস্টিটিউট। তারপর এই হিরেটি অনেক হাত ঘুরেছে। এই মুহূর্তে জুবিলি হিরের (Jubilee Diamond) মালিকানার দায়িত্বে রয়েছেন রবার্ট মৌওয়াদের নামক লেবাননের এক হিরে ব্যবসায়ী।