Sameeran Chakraborty, a resident of Kalna, is teaching for just one rupee: শিক্ষা নিয়ে বর্তমান সমাজে যে ব্যবসা চলছে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করা কল্পনার বাইরে। কিন্তু এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন কালনার বাসিন্দা সমীরণ চক্রবর্তী। পেশায় তিনিও ছিলেন একজন শিক্ষক (Teacher) কিন্তু বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের শেখানোর নেশা ছাড়তে পারেনি তিনি। তার ষোল আনার পাঠশালায় ছাত্র-ছাত্রীদের দক্ষিণা দিতে হয় মাত্র এক টাকা। এক টাকার বিনিময় ছাত্রছাত্রীরা পড়ার সুযোগ পায় অংক থেকে শুরু করে বিজ্ঞান, ইংরেজি সবকিছু। কালনার কৃষ্ণদেবপুরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সমীরণপ্রসাদ চক্রবর্তী এলাকার অভাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়িয়ে এক অদ্ভুত তৃপ্তি লাভ করেন। শুধুমাত্র পুঁথিগত পড়াশোনা করিয়ে ক্ষান্ত হন না তিনি বরং কিভাবে শৃঙ্খলাপরায়ন এবং আদর্শ মানুষ হওয়া যায় তার শিক্ষা দেন তিনি।
সমীরণ চক্রবর্তী আসলে কালনা ৩ নম্বর চক্রের বাদলা প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক (Teacher) ছিলেন, ২০২১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তার পিতাও ছিলেন পেশায় একজন শিক্ষক। সমীরণবাবুর ছেলে সৌম্যদীপ বর্তমানে পিএইচডি করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সমীরণবাবুর হাতের লেখা ছাপার অক্ষরের মতো পরিষ্কার যার জন্য বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে শংসাপত্র লেখার ডাক পান তিনি। ২০১৮ সালে বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিস থেকে চক্রের সেরা শিক্ষকের সম্মান পান।
অবসর নেওয়ার পর তিনি চিন্তাভাবনা করেছিলেন এক টাকার বিনিময় এলাকার অভাবী ছাত্র-ছাত্রীদের তিনি পড়াবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ, বাড়ির একটি ঘরেই শুরু করে দেন তার এই পাঠশালা। এই ষোল আনার পাঠশালায় সোম থেকে শুক্রবার সকালের ব্যাচে পড়ান প্রাথমিকের ছাত্রছাত্রীদের। তিনি সন্ধ্যেবেলা পড়ান ক্লাস ফাইভ থেকে নাইনের পড়ুয়াদের। তার মোট ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা বর্তমানে ৪০ জন। ছাত্র-ছাত্রীরা মাসের শেষে স্যারের ঘরে রাখা একটি ভাঁড়ে এক টাকা করে দক্ষিণা দেয়।
শিক্ষক সমীরণবাবু (Teacher) শিক্ষকতা করার নেশা অবসর গ্রহণের পরেও ছাড়তে পারেননি। অবশ্য এই কাজে তার প্রধান অনুপ্রেরণা হল ২ টাকার শিক্ষক হিসেবে পরিচিত সুজিত চট্টোপাধ্যায়। ২০২১ সালে শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য পদ্মশ্রী পান আউশগ্রামের উত্তর রামনগরের বাসিন্দা সুজিত চট্টোপাধ্যায়। তবে বয়সের ভারে এখন আর তিনি পড়ান না। কোনো একসময় তিনশোর বেশি পড়ুয়া পড়াতেন তিনি। ‘সদাই ফকিরের পাঠশালায়’ দক্ষিণা নেওয়া হতো বছরে দু’টাকা। পড়ুয়াদের পিছনে তিনি খরচ করতেন সমস্ত টাকা। তার এই চিন্তাভাবনা থেকেই অনুপ্রেরিত হয়েছেন সমীরণবাবু। সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তার এই উদ্যোগ।
তিনি বলেন, তার ভাঁড় প্রায় ভরে এসেছে। এবার ভাঙ্গা হবে এবং সেই টাকা ছেলেমেয়েদের কাজেই লাগানো হবে। সৌম্যদীপ বাবার এই প্রচেষ্টায় খুবই খুশি। বাবার কাছ থেকেই তিনি শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে শিখেছেন। যখনই সময় পান বাবার পাঠশালায় বাবাকে সহযোগিতা করেন তিনি। ‘ষোলো আনার পাঠশালার’ ক্লাস নাইনের ছাত্রী ত্রিপর্ণা রায় স্কলারশিপ পেয়েছে। তার বক্তব্য, ‘স্কলারশিপের জন্য সম্পূর্ণ কৃতিত্বই স্যারের। যখন যেটা জানতে চাই স্যর হাসিমুখে বুঝিয়ে দেন।’
আবার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রিমি মণ্ডল বলে এখানে আসলে কোনোদিন খাতা, পেনের অভাব হয়না তাদের। কেউ ভুলে গেলে স্যার সব ব্যবস্থা করে দেন। তিনি ঘরে পেন, খাতা রেখে দেন। এক অভিভাবক তাপস রায় বলেন, বর্তমানে সমাজে যেরকম ব্যবসা চলে সেখানে সমীরণ স্যর (Teacher) একজন দৃষ্টান্ত। তিনি রয়েছেন বলেই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করি না।’