Love: ভালোবাসায় সবই সম্ভব। ভালোবাসা না মানে বয়স, না মানে দূরত্ব। ভালোবাসার কাছে সমস্ত বাধাই মূল্যহীন। প্রকৃত ভালোবাসাকে সম্মান জানাতে কত জনে কত কিছু করেছেন। ইতিহাসে এমন নিদর্শন অনেক রয়েছে। ভালোবাসার (Love) জন্য নিজের জীবন দিয়ে দেবার ঘটনাও শোনা যায়। বর্তমানে তেমন নিদর্শন খুব একটা দেখা যায় না। তবে তেমন নিদর্শন যে একেবারে নেই তা কিন্তু নয়। সম্প্রতি একটি ঘটনা সামনে এসেছে। না ভালোবাসার জন্য জীবন দেয়নি কেউ। কিন্তু এক যুবক শুধু ভালোবাসার জন্য প্রতিদিন অতিক্রম করে চলেছেন অনেক দুরের পথ। স্ত্রীর টানে প্রতিদিন ৩২০ কিমি যাতায়াত! যুবকের পরিশ্রম দেখে কুর্নিশ নেটিজেনদের।
না ভারতে নয়, প্রতিদিন এই ঘটনা ঘটে চলেছে পূর্ব চীনে। পূর্ব চীনের শ্যানডং প্রদেশের ওয়েইফাং এলাকায় বসবাস করেন এই যুবক। ৩১ বছরের এই যুবকের নাম লিন শু। সম্প্রতি তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় তার জীবনের এই অবাক করা কাহিনী তুলে ধরেছেন। সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে ছেড়ে মোটেই থাকতে চাইছেন না লিন। যতটা সম্ভব বেশি সময় স্ত্রীর সাথেই কাটাতে চান তিনি। আর সেই কারণে স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার (Love) টানে রোজ ৩২০ কিলোমিটার পথ পার করেন তিনি। বাড়ি থেকে তার কর্মক্ষেত্রের দূরত্ব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। শুধুমাত্র স্ত্রীকে সময় দেবেন বলেই যাতায়াত মিলিয়ে মোট ৩২০ কিলোমিটার পথ তিনি অনায়াসে অতিক্রম করে ফেলেন।
বাড়ি থেকে অফিস যেতে সময় লাগে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। অর্থাৎ অফিসে গিয়ে আবার ফিরে আসতে যাতায়াতই সময় চলে যায় প্রায় ৮ ঘন্টা। তার ওপর অফিসের সময় তো রইলোই। এত খাটাখাটনির পরও ক্লান্তির ছাপ নেই এই যুবকের মধ্যে। জীবনটাকে একটা বাধা ধরা ছকের মধ্যে বেঁধে ফেলেছেন তিনি। উদ্দেশ্য স্ত্রীকে খুশি রাখা, স্ত্রীর কাছে থাকা, তাকে সময় দেওয়া। লিন প্রতিদিন ভোর পাঁচটার সময় ঘুম থেকে ওঠেন। তারপর ২০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। বাড়ি থেকে বাইকে করে রেলস্টেশন অব্দি যেতে তার সময় লাগে আধ ঘন্টা। তারপর ৬ টা ১৫ র ট্রেন ধরে আটটা নাগাদ তিনি পৌঁছান কিংদাও স্টেশনে। সেখান থেকে আবার মেট্রোতে ১৫ মিনিটের পথ অতিক্রম করতে হয় অফিসে পৌঁছানোর জন্য।
আরও পড়ুন ? Bangla Sahayata Kendra: আপনার বাড়ির কাছে কোথায় রয়েছে বাংলা সহায়তা কেন্দ্র, জানার সহজ উপায়
অফিসের সময় শুরু হয় নটা থেকে। তাই অফিসের কাজ শুরু হওয়ার আগেই ক্যান্টিন থেকে সকালের জলখাবার খেয়ে নিতে হয় তাকে। কাজ শেষ করে আবারো একইভাবে তিন তিনটি আলাদা যানবাহনের সাহায্যে ১৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফিরে আসেন বাড়িতে। না শুরু থেকে তার জীবনযাত্রা এমন ছিল না। এই পদ্ধতি তিনি শুরু করেছেন বিয়ের পর থেকে। শুধুমাত্র স্ত্রীর ইচ্ছেকে সম্মান দিতে তার এই সিদ্ধান্ত। ৭ বছরের প্রেম আর তারপর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া প্রেয়সীর সাথে। সেই প্রেয়সীর সব ইচ্ছে পূরণ করা তো স্বামীরই কর্তব্য। সেই কর্তব্যই করে চলেছেন লিন। বিয়ের আগে অফিসের সামনে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি। বিয়ের পর স্ত্রীর ইচ্ছেতে ১৬০ কিলোমিটার দূরে বাড়ি ভাড়া করেন।
আপনারা হয়তো ভাবছেন স্ত্রীকে কাছে রাখাই যখন উদ্দেশ্য, তাহলে অতদূরে বাড়ি ভাড়া নেওয়ার কি দরকার ছিল? আগে যে বাড়িতে থাকতেন সেখানে তো স্ত্রীকে এনে রাখতে পারতেন। কিন্তু লিনের স্ত্রী ওয়েইফাং এলাকায় থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন তার স্বামীর কাছে। আর সেই ইচ্ছেকে সম্মান জানাতেই অসুবিধা হবে জেনেও ওই এলাকায় বাড়ি ভাড়া করেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি নিজের প্রাত্যহিক দিনলিপির বর্ণনা করার পাশাপাশি এটাও বলেছেন যে তার স্ত্রী তার অফিসেরই আশেপাশে কাজ খুঁজছে যদি সে কাজ পেয়ে যায় তাহলে তারা আবারও কাছাকাছি কোন এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলে আসবে। লিনের অফিসের ম্যানেজারও তাকে যথেষ্ট সাহায্য করে বাড়ি দূরে বলে তাকে অতিরিক্ত সময় অফিসে আটকে থাকতে হয় না। নেটিজিনদের মধ্যে একজন তার এই বিবরণ শুনে সমস্ত খরচ খরচা হিসেব করে বলেছেন, লিন প্রতিমাসে শুধুমাত্র যাতায়াত খরচা বাবদ ভারতীয় মুদ্রায় ১৮ হাজার টাকা খরচ করছে।