হুগলি : অভাব অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে এই নিত্যদিনের অভাব অনটনকে সঙ্গী করেই নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য ঝাঁপিয়ে থাকতেন হুগলির জয়ন্ত (KBC jayanta Duley)। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো কেবিসির (KBC) মঞ্চে একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা জয়ের পরিপ্রেক্ষিতে। অমিতাভ বচ্চনের সামনে হট সিটে বসে বুদ্ধি ও মেধার জোরে এমন জয় এনেছেন হুগলির জয়ন্ত।
হুগলির জয়ন্ত দুলের পারিবারিক পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে টিনের চাল আর মাটির ঘরেই তার বাস। তার আয়ের মূল উৎস হল গ্রামের ছোট্ট একটি মুদিখানা। আর সেই মুদিখানার দোকান থেকেই তিনি কৌন বানেগা ক্রোড়পতিতে পৌঁছে যান, যেখান থেকেই সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা জয় করতে সক্ষম হন। শুধু টাকা জয় নয়, এর পাশাপাশি নিজের পরিবারের এবং গ্রামের সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন দেশের সামনে। তার থেকে তার ও তার গ্রামের অবস্থার কথা শুনে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন অমিতাভ বচ্চন।
জয়ন্ত দুলে হলেন হুগলির আরামবাগের গোঘাটের বেঙ্গাই অঞ্চলের বাসিন্দা। তার বাড়িতে তার সঙ্গে থাকেন মা-বাবা ও বোন। জয়ন্ত ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী একজন পড়ুয়া ছিলেন। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকেই তিনি কেবিসির মতো রিয়ালিটি শো-এ অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। ৭-৮ বছরের প্রচেষ্টায় অবশেষে এমন জনপ্রিয় মঞ্চে পৌঁছানোর সুযোগ তিনি পান। আর সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করে ফেলেন।
আরও পড়ুন : Foxconn: ১০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আসছে দেশে, খুলে যাবে কর্মসংস্থানের নতুন দরজা
কেবিসির মঞ্চে অমিতাভ বচ্চন যখন তাকে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন সেই সময় তিনি তার সঙ্গে গল্পেও মেতে ওঠেন। আর সেই গল্প করতে করতেই তিনি গ্রামের দুরবস্থার কথা বিগ-বির সামনে তুলে ধরেন। গ্রামের কঠিন পরিস্থিতি যে তাকে প্রতিনিয়ত নাড়া দেয় তা তার কথাতেই স্পষ্ট। তিনি জনপ্রিয় ওই রিয়ালিটি শো এর মঞ্চেই তুলে ধরেন, গ্রামের মানুষ কিভাবে এখনো পর্যন্ত পুকুরের জল ব্যবহার করে চলেছেন। এছাড়াও শৌচালয় ছাড়াই কিভাবে মানুষ পুকুরে স্নান থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজকর্ম করে থাকেন। এমনকি এই সকল কথা বলতে বলতে তিনি জানান, তার নিজের বাড়িতেই শৌচাগার থাকলেও স্নানাগার নেই। আর যে কারণে তার মা-বোনকেও পুকুরে স্নান করতে হয়। আর এই কথা শুনে অমিতাভ বচ্চন জয়ন্তের বাড়িতে স্নানাগার তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব নেন।
আর্থিক দিক দিয়ে জয়ন্ত দুলে পিছিয়ে থাকা একজন মানুষ হলেও পড়াশোনার দিক দিয়ে তিনি কিন্তু কখনোই পিছিয়ে থাকার ছেলে ছিলেন না। নিজের মেধার জোরে তিনি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন এবং সেখান থেকে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন। জয়ন্তর এইভাবে জাতীয় স্তরের একটি জনপ্রিয় রিয়েলিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবেই খুশি গ্রামের বাসিন্দারাও। অংশগ্রহণের পাশাপাশি তার সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা জয় সবার মুখেই হাসি ফুটিয়েছে।