Manipur: মণিপুর, ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এক স্বপ্নময় রাজ্য, যেখানে প্রকৃতি যেন নিজের সবটুকু সৌন্দর্য নিংড়ে ঢেলে দিয়েছে। ঠান্ডা মিষ্টি হাওয়া, দূষণমুক্ত পরিবেশ এবং সবুজ অরণ্যের আচ্ছাদনে মোড়ানো মণিপুরে যে কেউ একবার পা রাখলেই হারিয়ে যাবে প্রাকৃতিক রূপের রাজ্যে। সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ এই রাজ্যটির প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে আছে একেকটি বিস্ময়। বাঙালিরা তো রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রাঙ্গদা’র জন্য মণিপুরের নাম শুনেছেন, তবে এখানে আছে এমন সব জায়গা, যা ভ্রমণপ্রেমী থেকে শুরু করে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় সবাইকে চমকে দেবে।
বরাক নদী: রহস্যময় প্রকৃতির আঁচল
মণিপুরের (Manipur) বরাক নদী যেন প্রকৃতির এক লুকানো ধন। উত্তর-পূর্ব ভারতের চারটি রাজ্য অতিক্রম করে বাংলাদেশ পেরিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশে যাওয়া এই নদী শুধু নদী নয়, এটি এক জীবন্ত স্বর্গ। বরাক নদীর উপত্যকায় অসংখ্য জলপ্রপাত আর ঘন অরণ্য মনোমুগ্ধকর। এখানে চোখে পড়বে শুশুক, ডলফিন, এবং কালো রঙের বিরল কুমিরের দল। এ যেন প্রকৃতির সঙ্গে এক ভিন্ন জগতের মিতালি।
কেইবুল লামজাও জাতীয় উদ্যান: বিশ্বের একমাত্র ভাসমান উদ্যান
এটা কি কখনও শুনেছেন যে কোনো উদ্যান ভাসতে পারে? মণিপুরের (Manipur) লোকটাক হ্রদের ওপর অবস্থিত কেইবুল লামজাও জাতীয় উদ্যান হলো বিশ্বের একমাত্র ভাসমান উদ্যান। এখানে দেখা মিলবে সাংগাই হরিণের, যার নামেই মণিপুরের গর্ব। জল এবং জঙ্গলের অপূর্ব সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা এই অভয়ারণ্য প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। ভ্রমণের সময় জলজ উদ্ভিদ ও বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী আপনাকে মুগ্ধ করবে।
শিরুই পাহাড়: ফুলে মোড়া পর্বত
মণিপুরের আরেকটি রত্ন হলো উখরুলের শিরুই পাহাড়। মে-জুন মাসে এই পাহাড়ের গায়ে ফুটে ওঠে এক বিশেষ প্রজাতির ফুল—শিরুই লিলি। সারা পৃথিবীতে কেবল এই পাহাড়েই এই ফুল ফোটে, যা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। শিরুই লিলির সুরভি ও সৌন্দর্য যেন এক রূপকথার দুনিয়ায় নিয়ে যায়। এই এলাকায় আরও ঘুরে আসতে পারেন খায়াং পার্ক, শিরুই কাশুং শৃঙ্গ, এবং নিল্লাই চা বাগান, যা আপনার মণিপুর ভ্রমণকে আরও রঙিন করে তুলবে।
আরো পড়ুন: পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসুন মিনি তিব্বত থেকে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পেগলে যাবেন আপনি
ডেইলং বায়োডাইভার্সিটি হেরিটেজ সাইট: প্রকৃতির বুকে জীবনের সঞ্চারণ
মণিপুরের ডেইলং বায়োডাইভার্সিটি হেরিটেজ সাইট হলো প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। এখানকার জীববৈচিত্র্য এতটাই সমৃদ্ধ যে আপনি নতুন নতুন জীবজন্তু আর উদ্ভিদ আবিষ্কারের সুযোগ পাবেন। ভারতীয় বুনো কমলা ফলের দুর্লভ প্রজাতি এখানেই পাওয়া যায়, যা একে আরও বিশেষ করে তুলেছে। এই স্থানটি প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জন্য এক আদর্শ স্থান।
পবিত্র রেনগান অরণ্য: আদিবাসীদের জীবনধারণের মূল উৎস
টেমেংলং জেলার রেনগান অরণ্য মণিপুরের আদিবাসীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। এই অরণ্য শুধু তাদের রুজি-রোজগারের প্রধান উৎস নয়, এটি তাদের জীবনধারণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানকার গাছপালা, ফল, ভেষজ ও কাঠ সংগ্রহ করে তারা জীবন যাপন করে। রেনগান অরণ্য যেন আদিবাসী সংস্কৃতির এক জীবন্ত নিদর্শন, যেখানে প্রকৃতি ও মানুষ একে অপরের পরিপূরক।
মণিপুর ভ্রমণকারীদের জন্য এক চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা, যেখানে প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং ইতিহাস একত্রিত হয়ে তৈরি করেছে এক অনন্য ভুবন।