নিজস্ব প্রতিবেদন : গত বুধবার ভোররাতে সিকিমে (Sikkim) যে বিধ্বংসী বন্যা হয়, সেই বিধ্বংসী বন্যায় (Sikkim Flood) ২৩ জন সেনা জওয়ান নিখোঁজ ছিলেন। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন সেনা জওয়ানের দেহ উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ওই সেনা জওয়ানদের মধ্যে একজন সেনা জওয়ান হলেন বীরভূমের (Birbhum)। বিধ্বংসী বন্যায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হল। তার এইভাবে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া খুবই মর্মান্তিক। কেননা দুর্ঘটনার কিছু পরেই তাদের ওই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।
সিকিমের বন্যায় বীরভূমের যে সেনা জওয়ান শহীদ হয়েছেন তিনি হলেন গোপাল মাড্ডি। ২৮ বছর বয়সী ওই যুবক ময়ূরেশ্বরের নান্দুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১৪ সালে সেনাবাহিনীতে কাজ করার সুযোগ পান। এরপরেই দেশ সেবায় তিনি বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছেন। এবার তার পোস্টিং ছিল বিনাগুড়িতে। সেখান থেকেই তিনি সিকিমে ডিউটি করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ডিউটি করতে গিয়ে আর জীবিত অবস্থায় তার ফেরা হলো না।
শহীদ সেনা জওয়ান গোপাল মাড্ডির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সিকিমের বাবা ধামে তিনি ডিউটির জন্য গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে ফেরার সময় তিনি এবং আরও ২২ জন সেনা জওয়ান বালডাঙ্গের কাছে সিংটম এলাকায় একদিন বা দুদিনের জন্য ছিলেন। বুধবার সকাল ছয়টার সময় তাদের সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখান থেকে বের হওয়ার আগেই লোনাক লেক ভেঙ্গে এমন হড়পা বন্যার সৃষ্টি হয়। তখনই তারা নিখোঁজ হয়ে যান।
গোপালের নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছিল। কিন্তু তারপর বুধবার থেকে আর কোনোভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি। এরপর গোপালের অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এমন ঘটনার কথা জানান। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর তরফ থেকেও পরিবারের সদস্যদের জানানো হয় গোপাল সহ ২৩ জনের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা। বুধবার থেকে তাদের খোঁজ চালানোর পর শুক্রবার বিকাল ৪ঃ০০ টের সময় গোপালের পরিবারের সদস্যদের সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়, তিনি মৃত।
শহীদ সেনা জওয়ান গোপালের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি শেষবার বর্ষাকালে বাড়ি এসেছিলেন। এবার কালীপুজোয় তার বাড়ি আসার কথা ছিল। তবে কালীপুজোর সময় বাড়ি আসার কথা থাকলেও তা আর হলো না। সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি গোপালের নিথর দেহ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। সেনাবাহিনীর তরফ থেকে গোপালের শেষকৃত্য করার আগে সম্মান দেওয়া হবে।
এইভাবে অকালে ছেলেকে হারিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ভেঙ্গে পড়েছেন শহীদ সেনা জওয়ানের মা-বাবা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। তারা এখন একপ্রকার বাকরুদ্ধ। তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তাদের ছেলে আর কোন দিন জীবিত অবস্থায় বাড়ি ফিরবেন না। অন্যদিকে শহীদ সেনা জওয়ানের স্ত্রীও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তাদের মাত্র দু’বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনিও এখন দিশেহারা।