লাল্টু : রাতের অন্ধকারে কুকুরের ঘেউঘেউ চিৎকার আর শিশুর কান্না পথচলতি দম্পতিকে থামায়। কাছে যেতেই দেখা যায় সদ্যজাত শিশু। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার গভীর রাতে বীরভূমের সদাইপুর থানার বাঁধেরসোল মোড়ের কাছাকাছি জঙ্গলে। শিশুর কান্না শুনে কাছে যাওয়া দম্পতি হলেন ভবানীপুরের চাঁদ বাউরি ও আরতী বাউরি।
জানা গিয়েছে, এদিন তারা রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বাইকে চড়ে ইলামবাজার থানার ধরমপুরের এক আত্মীয়ের অসুস্থতার খবর শুনে তাকে দেখতে যাচ্ছিলেন। তখনই হঠাৎ ওই সদ্যজাত শিশুর কান্না শুনতে পাওয়া যায়। তারপর তারা রাস্তার ধারে বাইক থামিয়ে জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখতে পান একটি শাল গাছের ঝোঁপে চটের থলির মধ্যে থেকে শিশুর কান্না ভেসে আসছে। চটের থলি সহ জঙ্গল থেকে শিশুটিকে তুলে আনা হয়।
তবে ওই দম্পতি জানান, থলি সহ শিশুটিকে পাশেই টহলদারি দেওয়া সদাইপুর থানার পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়ারদের নজরে আনতে তারা কেমন যেন গা ছাড়া ভাব দেখায়। এরপর তারা আর দেরি না করে ধরমপুর যাবার পথে সাতকেন্দুরীতে দুবরাজপুর থানা টহলদারি পুলিশকে সবকিছু জানান এবং থানার ওসি মাধব চন্দ্র মণ্ডলের নজরে আনেন। তখন রাত প্রায় সাড়ে ১২টা। সঙ্গে সঙ্গে দুবরাজপুর থানার ওসি চটের থলি সহ শিশুটিকে নিয়ে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। সঙ্গে ছিলেন দম্পতিও। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তথা ব্লক মেডিকেল অফিসার গৌরভ বাইন পুলিশ ও উদ্ধারকারী দম্পতির সামনে চটের থলি থেকে সদ্যোজাত শিশুটি বের করেই চমকে ওঠেন। দেখা যায় সদ্যজাত ওই শিশুটি পুত্রসন্তান এবং তখনও তার নাভির নাড়ি কাটা হয়নি। প্রসব হতেই চটের থলেতে ভরে কেউ জঙ্গলের ধারে ফেলে দিয়েছে।
কর্তব্যরত চিকিৎসক সদ্যজাত ওই পুত্রসন্তানের নাড়ি কেটে প্রাথমিক চিকিৎসার পর সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। দুবরাজপুর থানার ওসি মাধবচন্দ্র মন্ডল মানবিকতার পরিচয় দিয়ে একটি গাড়ি করে সরাসরি সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল পাঠিয়ে দেন। সেইসঙ্গে সরকারি নিয়ম মেনে শিশুপুত্রটি কুড়িয়ে পাওয়া ঘটনা নথিভূক্ত করেন।
এরপর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উদ্ধার হওয়া ওই সদ্যোজাত শিশুকে বর্তমানে সুস্থ রয়েছে। আর গভীর রাতে এইভাবে সদ্যজাতকে উদ্ধার করা ওই দম্পতির সাহসিকতা এবং বিচক্ষণতাকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ভূয়শী প্রশংসা করেছেন।