হিমাদ্রি মন্ডল : একুশের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের জেলার বিভিন্ন এলাকায় বুথ ভিত্তিক কর্মীসভার আয়োজন করা হয়েছে। আর এই সকল কর্মী সভার প্রথম কর্মী সভা ছিল বুধবার সিউড়ি দু’নম্বর ব্লকের পুরন্দরপুর বান্ধব সমিতির মাঠে।
চলতি মরশুমের প্রথম বুথ ভিত্তিক কর্মীসভায় এদিন দেখা গেল সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত মাজিগ্রামের বুথ সভাপতি গণেশ রায়কে অনুব্রত মণ্ডলের চোখে চোখ রেখে রাস্তা সারাইয়ের দাবি তুলতে। আর সেই দাবি ঘিরে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সাথে ওই বুথ সভাপতির মনকষাকষি হয়। যার পরেই বুথ সভাপতির পদ থেকে ওই ব্যক্তিকে সরিয়ে দেন অনুব্রত মণ্ডল আর সাথে সাথেই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। কর্মীসভার বৈঠক থেকে ওই বুথ সভাপতির অনুগামীদের বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হলে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হয় তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহকে। যদিও অনুব্রত মণ্ডলের দাবি এটা কিছুই না। কিন্তু এর পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কি এমন ঘটলো যাতে করে স্বয়ং বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সামনে এমন বিশৃঙ্খলা!
সভায় বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ওই বুথ সভাপতি গণেশ রায়ের প্রশ্নোত্তর পর্ব
অনুব্রত মণ্ডল : এত কিছু করার পরেও কেন আমরা ওই দুটো বুথে হেরে আছি?
গণেশ রায় : আমরা হেরে আছি প্রথমত ওই রাস্তা। আর দ্বিতীয়ত যে সকল পায়খানা বাথরুমগুলো হয়েছে সেখানে রিং বসে নায়, দরজা পায় নায় এইসব কারণে।
অনুব্রত মণ্ডল : এত কাজ করার পরেও বলতে পারছেন দাঁড়িয়ে! ৩৪ বছরে বামফ্রন্ট কিছু করে নাই। এত কাজ করার পরেও বলছেন!
গণেশ রায় : আজ আমি যখন আসছিলাম তখন আমার এক ভাই বলছিলেন, ‘দাদা রাস্তায় কি মাছ চাষ করবেন?’ আমি উত্তর দিতে পারি নাই।
অনুব্রত মণ্ডল : তা ৩৪ বছর আগে কেন করেন নাই। আমরা তো সবে ৯ বছর এসেছি। তা ৩৪ বছর আগে কিভাবে কষ্ট করে যেতেন?
গণেশ রায় : তখন মোটামুটি সাইকেলটা যেত। এখন রাস্তার যা অবস্থা দু’পাশে জল দাঁড়িয়ে আছে, সাইকেল নিয়েও যাওয়া যায় না।
অনুব্রত মণ্ডল : ৩৪ বছর আগে ভালো ছিল? বামফ্রন্ট আমলে ভালো ছিল?
গণেশ রায় : এর থেকে ভালো ছিল।
অনুব্রত মণ্ডল : তার মানে আমরাই খারাপ করে দিলাম তো? তার মানে যতই দি আপনার পেট ভরবে না?
গণেশ রায় : কি এমন পেলাম যে পেট ভরল না আমার?
আর এরপরই অনুব্রত মণ্ডল রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন ওই বুথ সভাপতির সামনে। আর এইসব প্রশ্ন-উত্তরের পরেই অনুব্রত মণ্ডল মেজাজ হারিয়ে ওই বুথ সভাপতি গণেশ রায়কে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। তিনি জানান, “আপনিতো ভোটই করতে পারবেন না। বুথ কমিটি থেকে সরাও একে। এই ধরনের লোক থাকার থেকে না থাকাই ভালো।”
ঘটনার পর সভা শেষে অনুব্রত মণ্ডল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, “ওসব কিছু না। রাস্তা নিয়ে একটা ঝামেলা হয়েছিল, ঠিক হয়ে যাবে।”