লক্ষাধিক টাকার চাকরি ছেড়ে মোমো বিক্রি করছেন শান্তিনিকেতনের যুবক সৌভিক

নিজস্ব প্রতিবেদন : বেকার যুবক যুবতীদের প্রথম স্বপ্ন হলো চাকরি পেয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করা। এই চাকরির টানে এইসকল বেকার যুবক যুবতীদের পড়াশোনা, কোচিং, ট্রেনিং সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে পড়াশোনা করতে লক্ষ্য করা যায়। তবে বীরভূমের এক যুবক এমন লক্ষাধিক টাকার চাকরি পেয়েও সেই চাকরি ছেড়ে এখন মোমো বিক্রিতে মজেছেন।

এমন উল্টো পথে হাঁটা যুবক হলেন সৌভিক গড়াই। তাকে মোমো বিক্রিতে দেখা যাবে শান্তিনিকেতনের ডাকঘরের কাছে। প্রতিদিন বিকাল গড়ালেই তিনি নিজের দোকানের পসরা নিয়ে হাজির হন এই এলাকায়। আবার সৌভিকের দোকানের এই মোমো সম্প্রতি এতটাই সুস্বাদু হয়ে উঠেছে যে তার দোকান খোলার অপেক্ষায় অনেকেই বসে থাকেন।

তবে প্রশ্ন হল সৌভিক এমন লক্ষাধিক টাকার চাকরি ছেড়ে কেন মোমো বিক্রিতে মজলেন? এর পিছনে যে কারণ রয়েছে সেই কারণ জানার আগে জেনে নিতে হয়, সৌভিক যখন চাকরিতে ছিলেন তখন তিনি কত টাকা বেতন পেতেন? সৌভিক বিশ্বভারতীতে জাপানি ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করার পর মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরির সুযোগ পান। সেই সময় ওই সংস্থার সঙ্গে তার বছরে সাড়ে চার লক্ষ টাকা চুক্তি হয়। বর্তমানে তারই সঙ্গে নিযুক্ত সহকর্মীরা মাসিক লক্ষাধিক টাকা করে বেতন পেয়ে থাকেন।

কিন্তু সৌভিক জানিয়েছেন, “আমি ছোট থেকে মুক্ত পরিবেশে মানুষ হয়েছি। এমত অবস্থায় যখন ওখানে চাকরি করতে যায় তখন কাজের কেমন চাপ না থাকলেও চার দেওয়াল আমাকে কারাগারের মতো বেদনা দেয়। দীর্ঘ ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা ওই চার দেওয়ালের মধ্যে কাজ করাটা আমার কাছে নরকযন্ত্রণায় পরিণত হয়। এরপর কোনক্রমে এক বছর কাটিয়ে ফিরে আসি। ফিরে এসে মাস্টার ডিগ্রী করি, তবে আর ফিরে যাই নি। এখানেই মোমোর দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করি।”

লক্ষাধিক টাকার চাকরি ছেড়ে মোমোর দোকান করে অর্থ উপার্জন করার ক্ষেত্রে বিশাল একটা ফারাক রয়েছে। তবে এই ফারাককের থেকে সৌভিক শান্তিকে আগে দেখেন। এই বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘তখন টাকা ছিল, সুখ ছিল কিন্তু শান্তি ছিল না। এখন কষ্ট হলেও শান্তি আছে।’

অন্যদিকে লক্ষাধিক টাকার চাকরি ছেড়ে কেন মোমোর দোকান? অন্য কোন ব্যবসাও তো করতে পারতেন? এই বিষয়ে সৌভিক জানিয়েছেন, “বোলপুরের মানুষদের মধ্যে মোমোর চাহিদা রয়েছে। তবে এখানে যারা মোমো বিক্রি করে থাকেন তারা এর মধ্যে তেমন ভ্যারাইটি আনতে পারেন না। সেই জায়গাটিকে কাজে লাগিয়েই আমি কিছু একটা করে উঠতে পারবো এমন চিন্তা ভাবনা করেই এই মোমোর দোকান খুলেছি।”