লাদাখের লেহ-তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পা রাখতেই মুখ খুললো বেজিং

নিজস্ব প্রতিবেদন : শুক্রবার সকালে লেহ’র ভারতীয় সেনা ঘাঁটিতে সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কোন ঘোষনা ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীর লেহতে পৌঁছানোর খবর দেশের মানুষকে চমকে দেয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন চিফ অফ আর্মি স্টাফ বিপিন রাওয়াত। উত্তেজনা প্রবণ ঘটনার একবারে মূল কেন্দ্রে হঠাৎ দেশের প্রধানমন্ত্রীর পৌঁছানো বড় ধরনের রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে বলেই মনে করা হচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওই এলাকায় পা রাখতে মুখ খুললো চীনের বেজিং সরকার।

কয়েক ঘন্টার মধ্যেই চীনের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি বার্তায় বলা হয়েছে, “উত্তেজনার পারদ কমাতে ভারত ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় কোন পক্ষের এমন কিছু করা উচিত হবে না যার ফলে উত্তেজনা বেড়ে যায়।”

এদিন সেনাবাহিনী ও আইটিবিপির জওয়ান ও অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেন ২০ জন শহীদ ভারতীয় সেনার প্রতি। অফিসার ও জওয়ানদের এমন আত্মত্যাগের জন‌্য প্রশংসাও করেন।
প্রধানমন্ত্রীর লাদাখের যাওয়ার পিছনে কোন সামরিক বা কূটনৈতিক কারণ আছে কিনা তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোড় রাজনৈতিক বিশ্লেষণ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে বর্তমানে ভারতীয় রাজনীতি আগের মতো শুধু প্রতিরোধ নয়, সীমিত আকারে আগ্ৰাসনও দেখাচ্ছে। আলোচনা এবং চোখে চোখ রাখার যে নীতি ভারত নিয়েছে তারই প্রতিফলন চরম উত্তেজনার মধ্যে সীমান্তে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই পৌঁছানো। যা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনেকটাই মনোবল জোগাবে।

চীনের প্রধান লক্ষ্য যুদ্ধ নয়, সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি করে পূর্ব এশিয়ায় নিজেদের বাণিজ্য ও সামরিক অবস্থান মজবুত করে নেওয়া। বিশ্ব রাজনীতির বৃহত্তর খেলায় আমেরিকা ও জার্মানি নিয়ন্ত্রিত ইউরোপের মোকাবিলা করতে গেলে তাকে এশিয়ায় তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ ভারতকে দুর্বল করে যেতে হবে। তারই সামরিক কূটনৈতিক আগ্ৰাসী খেলার সূত্রপাত ঘটিয়েছে চীন লাদাখের গালওয়ান সীমান্তে। চীন সমুদ্রে উত্তরোত্তর জাপান ও আমেরিকার সঙ্গে যেভাবে উত্তেজনা বাড়ছিল তার ভরকেন্দ্র লাদাখে সরিয়ে দিতে পেরে অনেকটাই সফল চীন।

তারই প্রতিক্রিয়ায় লেহ-তে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছে চীনকে বার্তা দিল প্রথম আঘাত খেয়ে এবার সে চীনের সামরিক ও রাজনৈতিক ভাষাতেই কথা বলবে এই ভারত। এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। চীনের এই আগ্ৰাসী মনোভাবে এশিয়া তথা বিশ্বের বহু দেশ ভারতকে সমর্থন জানিয়েছে। এদিন নয়াদিল্লিতে জাপানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেন বিদেশ‌ সচিব হর্ষবর্ধন সিংলা।

জাপানের রাষ্ট্রদূতের তরফ থেকে কড়া ভাষায় জানানো হয়েছে, লাদাখ সীমান্তে একতরফা স্থিতাবস্থা বদলানোর চেষ্টা করলে তার ফল খারাপ হবে। উত্তেজনা কমানোর জন্য বরং চীন ভারত আলোচনায় বসুক। যদিও আগ্ৰাসী চিনকে আলোচনার টেবিলে থামানো যাবে না, তার জন্য প্রয়োজন আগ্ৰাসী নীতি। লেহ-তে পৌঁছে সেই আগ্ৰাসী নীতির সূত্রপাত ঘটালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।