নিজস্ব প্রতিবেদন : চিকিৎসকদের ভগবান হিসাবেই গণ্য করা হয়। কেননা তাদের চিকিৎসায়, তাদের কলমের খোঁচায় প্রতিদিন হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ রোগীরা নতুন করে প্রাণ ফিরে পান। তবে এই সব চিকিৎসকদের ইদানিংকালে ব্যবসার অভিযোগ তুলতে দেখা যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, রোগী দেখতে শত শত টাকা নেওয়ার। যদিও এই সকল অভিযোগের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন ডাক্তার (Doctor) প্রতিনিয়ত সমাজে দৃষ্টান্ত তৈরি করে চলেছেন।
যে সকল চিকিৎসকরা সমাজে প্রতিনিয়ত এমন দৃষ্টান্ত তৈরি করে চলেছেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন পদ্মশ্রী প্রাপ্ত বীরভূমের বোলপুরের চিকিৎসক সুশোভন ব্যানার্জি। যিনি ২০২২ সালের ২৬ জুলাই প্রয়াত হন। তার চলে যাওয়ায় ভগবানকে হারিয়েছিল বীরভূমের বড় অংশ। কেননা তিনি মাত্র এক টাকায় রোগী দেখে আসতেন। ঠিক একইভাবে মাত্র এক টাকার বিনিময়ে রোগী দেখে আসা আরও এক চিকিৎসক চলে গেলেন। তার এইভাবে চলে যাওয়া দ্বিতীয়বারের জন্য ভগবানকে হারালো বাংলা।
সুশোভন ব্যানার্জির মতো এই চিকিৎসকও এক টাকার ডাক্তার (1 rupee Doctor) নামে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। চিকিৎসক সুশোভন ব্যানার্জির মতোই এক টাকার ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি লাভ করা ওই চিকিৎসক পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির বাসিন্দা। প্রবীণ এই চিকিৎসক হলেন মলয় সাহু। ওই চিকিৎসক এলাকার মানুষদের কাছে ভগবান হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। কেননা তিনি মাত্র এক টাকায় চিকিৎসা করে আসছিলেন দীর্ঘ দিন ধরে। যে কারণেই তিনি সাধারণ মানুষদের পাশাপাশি গরিবদের কাছে ভগবান হয়ে উঠেছিলেন।
মলয় সাহু কাঁথি শহরের বিখ্যাত চিকিৎসক অজিত সিংহের কাছে প্রথম সহায়ক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে নিজের বাড়িতেই দুঃখ সেবা সদন নামে একটি সেবা কেন্দ্র খোলেন এবং সেখান থেকেই চিকিৎসা করতেন গরিব ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষদের। তার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভিজিট নিয়ে কোন কথা হতো না। কারো কারো কাছে এক টাকা নিলেও আবার কারো কারো কাছে টাকায় নিতেন না। অন্যদিকে পরবর্তী সময়ে তিনি দু টাকা থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত নিতেন রোগীদের থেকে।
তার এই চিকিৎসা কেন্দ্রে কাটাছেঁড়া থেকে শুরু করে স্যালাইন, অক্সিজেন, ভাঙাভাঙি, শ্বাসকষ্ট সহ সব ধরনের রোগের চিকিৎসা পাওয়া যেত। এমন একজন গরীব দরদি চিকিৎসক সোমবার নিজের বাড়িতেই মধ্যরাতে মারা যান। তিনি তার শেষ জীবন কাঁথি শহরের উদয়ন রোডে থাকা নিজের বাড়িতেই কাটিয়েছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। এই চিকিৎসকের আদিবাড়ি হল কাঁথি ৩ ব্লকের কানাইদিঘি গ্রামে।