প্রসূন কান্তি দাসঃ আমরা সাধারণ মানুষ। ভবিষ্যৎ চিন্তায় আমরা ব্যাকুল হয়ে পড়ি। কিন্তু জ্যোতিষ শাস্ত্রে অনেকেই ভবিষ্যৎ গণনা করার ক্ষমতা রাখেন। সেই গণনা কেউ বিশ্বাস করে আবার কেউ ভুয়ো বলে উড়িয়েও দেয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে যখন সেই গণনা মিলে যায়, তখন তা অস্বীকার করার কোন জায়গা থাকে না। সেরকম একটি ঘটনা বহু বছর ধরে সারা পৃথিবী জুড়ে ঘটে চলেছে। পৃথিবীতে এমন বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে যার ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছিল অনেক আগে থেকেই। হ্যাঁ ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন বাবা ভাঙ্গা (Baba Vanga) নামক এক ব্যক্তি। প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যু থেকে শুরু করে বড় কোন দুর্যোগ এমনকি ৯/১১ আতংকবাদি হামলার খবরও তিনি অনেক আগেই ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। সব ভবিষ্যদ্বাণী বাণীই অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে! এবার ২০২৫-এ কোন ভয়ের খবর শুনিয়েছেন বাবা ভাঙা ?
এবার প্রশ্ন হল কে এই বাবা ভাঙ্গা (Baba Vanga)? এত বড় বড় দুর্ঘটনার ভবিষ্যৎবাণী তিনি কিভাবে করে দিলেন? সবার প্রথমেই জানিয়ে রাখি, বাবা ভাঙ্গা কিন্তু কোন পুরুষ নয়। নাম শুনে পুরুষ মনে হলেও, আসলে তিনি একজন মহিলা। তিনি বুলগেরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯১১ সালে। এরপর আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতনই এগোচ্ছিল তার জীবনও। কিন্তু মাত্র ১২ বছর বয়সে তার জীবনে ঘটে যায় সব থেকে বড় দুর্ঘটনা। বজ্রপাতের কারণে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। লোকোমুখে শোনা যায় এরপরই নাকি তার অন্তর্দৃষ্টি উন্মুক্ত হয়। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করতে থাকেন তিনি। এবং তার করা ভবিষ্যৎবাণী আজ পর্যন্ত ভুল হয়নি। সব থেকে মজার বিষয় হলো বাবা ভাঙ্গা কিন্তু বর্তমানে জীবিত নেই। ১৯৯৬ সালে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ২৭ বছর আগেই মৃত্যু হয়েছে তার। কিন্তু মৃত্যুর আগেই তিনি বহু দূরের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বেশ কিছু ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন।
বাবা ভাঙ্গা (Baba Vanga) আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সাল নিয়েও বেশ কয়েকটি ভবিষ্যৎবাণী করেছেন। বাবা ভাঙ্গার মতে ২৫ সালে পৃথিবী জুড়ে কি কি হতে চলেছে? ২০২৪ সাল নিয়ে বাবা ভাঙ্গা কয়েকটি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমি পুতিনের উপর প্রাণঘাতী হামলা, ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কার এবং সারা বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দা। যদিও বছরের মাঝামাঝি অব্দি এখনো তেমন কোন খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় এই ভবিষ্যৎবাণী মিথ্যা হবার সম্ভাবনা খুবই কম। বাবা ভাঙ্গার এই ভবিষ্যৎবাণী কতটা সত্যি হবে তা জানার জন্য বছর শেষ হওয়া অব্দি অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তার মাঝেই ২০২৫ সাল নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন তিনি।
বাবা ভাঙ্গা (Baba Vanga) ২০২৫ সালকে মানবতার পতন আর প্রলয়ের সূচনা হিসেবে ব্যাখ্যা করে গেছেন। তার মতে এখনো পর্যন্ত যতটুকু মানবতা বেঁচে রয়েছে তাও শেষের পর্যায়ে এসে দাঁড়াবে ২০২৫ সালে। এছাড়াও ইউরোপ সম্পর্কে একটি মারাত্মক ভবিষ্যৎবাণী করেছেন তিনি। বাবা ভাঙ্গা বলেছেন ইউরোপে ২০২৫ সালে এমন একটি সংঘর্ষের সৃষ্টি হবে যার প্রভাব পড়বে গোটা মহাদেশের উপর। গোটা মহাদেশের জনসংখ্যা প্রভাবিত হতে পারে এই সংঘর্ষের মাধ্যমে। তবে এই সংঘর্ষ শুধু ইউরোপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর প্রভাব পড়বে গোটা বিশ্বের উপর। বাবা ভাঙ্গা কিন্তু ২০২৫ সালের গণনা করেই থেমে থাকেননি। বলে গেছেন আরো বহু দূর ভবিষ্যতের কথা। তার ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী ২০২৬-এ নাকি শুক্র গ্রহে পৌঁছাতে চলেছে পৃথিবীর মানুষ। ২০৩৩ এ জলবায়ুতে ঘটতে চলেছে এমন এক পরিবর্তন যার ফলে গলে যেতে পারে গোটা উত্তর মেরুর হিমশৈল। এর ফলাফল হিসেবে সারা পৃথিবী জুড়ে কি পরিমানে জলস্তর বাড়বে এবং কতটা ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা হয়তো আমাদের ধারণারও বাইরে।
এছাড়াও একাধিক প্রাকৃত দুর্যোগ, বড় কোনো সংঘর্ষ বা কোন উন্নতি সব খবরই ভবিষ্যৎবাণী হিসেবে বলে গেছেন বাবা ভাঙ্গা (Baba Vanga)। তার করা সমস্ত ভবিষ্যৎবাণী এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা না গেলেও, কয়েকটি প্রধান প্রধান ভবিষ্যৎ বাণী তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাবা ভাঙ্গা বলে গেছেন ২০৭৬ সালে গোটা বিশ্বজুড়ে পুনরায় কমিউনিজম এবং সাম্যবাদের প্রতিষ্ঠা হবে। ২১৩০ সালে পূর্ণ হতে পারে একটি আশা। ভিনগ্রহীদের সাথে যুক্ত হবার আশা। যে বিষয়টি ২০২৪ এ এসেও কাল্পনিক বলে মনে করা হয়, সেই বিষয়টি হয়তো ২১৩০ সালে বাস্তব হয়ে উঠতে পারে। এরপর ২১৭০ সালে দেখা দিতে পারে ভয়ঙ্কর খরা। তবে বাবা ভাঙ্গার করা সব থেকে ভয়ানক ভবিষ্যৎবাণী হল পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যাওয়া। হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যাওয়া পর্যন্তই ভবিষ্যৎবাণী করেছেন বাবা ভাঙ্গা। তার মতে ২০৩৫ সালে মঙ্গল এবং পৃথিবীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধতে চলেছে। ৩৭৯৭ সালের পর আর বাসযোগ্য থাকবে না আমাদের পৃথিবী। এবং ৫০৭৯ সালের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের এই গ্রহ।