নিজস্ব প্রতিবেদন : অক্টোবর মাসে ভারতের সবথেকে বড় ৪জি সংস্থা রিলায়েন্স জিও লাগু করেছিল অন্য নেটওয়ার্কে কল করার জন্য প্রতি মিনিটে ৬ পয়সা। অন্য নেটওয়ার্কে আলাদা করে কল চার্জ ঘোষণার পরই বহু গ্রাহক রিলায়েন্স জিও থেকে মুখ ঘুরিয়ে চলে যায় এয়ারটেল, ভোডাফোন অথবা আইডিয়ার মত নেটওয়ার্কে। কিন্তু তাতে কি সমস্যার সমাধান হয়েছে! উত্তর না।
ভারতীয় বাজারে দিনের পর দিন লোকসানে চলছে টেলিকম সংস্থাগুলি। আর এই লোকসান থেকে বাঁচতে সিদ্ধান্ত একজোটে ট্যারিফ প্ল্যান বাড়ানোর। টেলিকম সংস্থাগুলির নতুন এই সিদ্ধান্তে সমস্যায় পড়তে চলছে গ্রাহক। এসপ্তাহেই জিও, ভোডাফোন আইডিয়া ও এয়ারটেল একজোটে ঘোষণা করে ১লা ডিসেম্বর থেকে তাদের প্ল্যানের দাম বাড়ানো হবে। সবার প্রথম এই ঘোষণা করে ভোডাফোন আইডিয়া। এরপর একে একে এয়ারটেল, জিও আর সবার শেষে বিএসএনএলও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে গ্রাহকদের পকেট থেকে আলাদা করে টাকা খসবে তা বলাই বাহুল্য। প্রসঙ্গত, ভারতে অন্যান্য উন্নত দেশগুলির তুলনায় মোবাইল খরচ অনেক কম। কিন্তু কত বাড়তে পারে মাশুল! যদিও এবিষয়ে সঠিকভাবে কোনো সংস্থাই এখনো পর্যন্ত কিছু জানায়নি ঠিক কতটা বাড়ানো হবে প্ল্যানের দাম।
তবে সম্প্রতি সর্বভারতীয় একটি টেলিকম সংক্রান্ত সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, এয়ারটেল, ভোডাফোন আইডিয়া আগামী মাস থেকে তাদের ট্যারিফের মূল্য ৩০% বাড়াতে পারে। রিপোর্টে এও বলা হয়েছে যে, কোম্পানিগুলো কোনো মতেই আর লোকসানে ব্যবসা করতে রাজি নয়। সেকারণে গ্রাহক পিছু গড় আয় বাড়াতে প্ল্যানের মূল্য সর্বোচ্চ যত পরিমান বাড়ানো যায় তার চেষ্টা করা হবে।
আবার অন্য একটি সর্বভারতীয় সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, রিলায়েন্স জিও-র উপর নির্ভর করছে এয়ারটেল ও ভোডাফোন আইডিয়া ট্যারিফ প্যাক কত টাকা বাড়াবে। কিছুদিন আগে আইইউসি-র জন্য প্রায় ১৫ শতাংশ খরচ বাড়িয়েছে। এবার যদি তারা আবার ১৫ শতাংশ খরচ বাড়ায় তাহলে বাকি দুই সংস্থাও প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত খরচা বাড়াতে পারবে। সূত্রের খবর, ১লা ডিসেম্বর থেকে জিও প্রায় ১৫ শতাংশ বা তার বেশি বাড়াতে পারে তাদের মাসুল।
কিন্তু কেন বাড়ানো হচ্ছে এই মাসুল! শুধুই লাভের মুখ দেখার জন্য! না অন্য কিছু?
গত কয়েক বছরে টেলিকম সংস্থাগুলির লোকসান বাড়ায় একপ্রকার ভারতীয় টেলিকম সেক্টর অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছিলো। ভোডাফোন ভারতে ব্যবসা বন্ধ করতে পারে গুঞ্জন ছড়িয়েছিলো। শুধু গুঞ্জন নয়, এ নিয়ে মুখ খোলেন স্বয়ং ভোডাফোন সিও নিক রিড। টেলিকম সংস্থাটির চিফ এগ্জ়িকিউটিভ নিক রিড জানান, ভারতে দীর্ঘ দিন ধরে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলেছে তাঁদের ব্যবসা। তাঁর কথা অনুযায়ী, “নিয়মে অসহযোগিতা, চড়া কর এবং সর্বোপরি সুপ্রিম কোর্টের রায় আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে। ফলে বিপুল আর্থিক বোঝা চাপছে।”
এরপরে সরকারের তরফে ট্রাইকে জানানো হয়েছিল সংস্থাগুলিকে লাভের মুখ দেখাতে আনলিমিটেড কল ও ডেটা পরিষেবা বন্ধ করতে। যার পরেই ভোডাফোন, এয়ারটেল এই সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে জিও আইইউসি চার্জ চালু করায় এমনিতেই তাদের ট্যারিফের মূল্য ১৫ শতাংশ বেড়েছে। ফলে জিও আর বেশি মূল্য বাড়াবে না বলেই মনে হয়। তবে ভোডাফোন ও এয়ারটেল ট্যারিফ মূল্য ৩০ শতাংশ দাম বাড়াতে পারে বলে খবর। পাশাপাশি সরকারের তরফ থেকে ভারতীয় টেলিকম সেক্টরকে বাঁচানোর জন্য প্রতিটি টেলিকম সংস্থাকে দুবছর সময় দেওয়া হয় বকেয়া মেটানোর জন্য।