নিজস্ব প্রতিবেদন : সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা তথা ভারতে কেউ না কেউ চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক তেমনই চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত তাকে ঘিরে কেন্দ্র ও রাজ্যের টানাপোড়েনের কারণেই তিনি এই চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন।
কেন্দ্র ও রাজ্যের টানাপোড়েনে শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে নিজের মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করে কেন্দ্রের থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। তবে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, কেন এই একজন আইএএস আধিকারিককে নিয়ে এত টানাপোড়েন? কি এমন রয়েছে এই আইএএস আধিকারিকের মধ্যে? আসলে তিনি হাজারো গুণের অধিকারী বলেই মত পোষণ করেছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ। আর তার এই কর্মজীবনের অধ্যায় অনুপ্রেরণা দেবে আপনাকেও।
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্র হিসেবে পরিচিত। মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি তার মেধার নিরিখে দাগ কেটেছেন। এমনকি কর্মজীবন অন্যভাবে সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে শুরু করলেও কঠিন অধ্যাবসায় একজন আইএএস আধিকারিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। আর তারপর থেকেই আমলাতন্ত্রে চরকিপাক খাচ্ছেন আলাপন বাবু।
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৭৬ সালে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। পরীক্ষার ফলাফল বের হতে দেখা যায় তিনি রাজ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। এরপর সেখান থেকেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাসে উত্তীর্ণ হন ১৯৭৮ সালে। আর সেই বছরই তিনি জাতীয় অন্বেষণ বৃত্তি লাভ করেন।
পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হন। সেখানেও তিনি তার মেধার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ফার্স্ট ক্লাসে এই বিভাগে স্নাতক হন। তার পরের বছরই তিনি নিজের পেশা বেছে নেন। পেশা হিসাবে তাঁর হাতেখড়ি হয় একজন সাংবাদিক হিসেবে। তবে এই সাংবাদিকতা করার সাথে সাথেই তিনি তার পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যান। ১৯৮৩ সালের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর হন।
সাংবাদিকতা হিসাবে পেশা বেছে নিলেও তার স্বপ্ন ছিল ভিন্ন। আর সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য কঠিন অধ্যবসায়, মেধা এবং নিজের একনিষ্ঠতার জেরে ১৯৮৭ সালে তিনি টপকে যান ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের কঠিন গন্ডি।
বাম আমলেও তিনি মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছের মানুষ ছিলেন। দুঁদে এই আমলার বুদ্ধিমত্তার উপর ভরসা রাখতেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী থেকে অন্যান্যরা। কর্মজীবনে তিনি হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ছিলেন। পরে কলকাতা পুরসভার কমিশনারের দায়িত্বও সামলেছেন। ২০১৫ সালে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদে বসেন। সচিব হয়েছেন পরিবহণ, ক্ষুদ্র, কুটির এবং মাঝারি শিল্প, তথ্য ও সংস্কৃতি, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের।
এরপর ২০১৭ সালে তিনি বসেন অতিরিক্ত মুখ্য সচিব পদে। দেখতে দেখতে দু’বছর পার হতেই ধীরে ধীরে পদোন্নতি হতে থাকে তার। ২০১৯ সালে তিনি স্বরাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর মুখ্যসচিব। আর আপাতত সব শেষে যখন তাকে ঘিরে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয় তখন তিনি কেন্দ্রের নির্দেশে দিল্লি না গিয়ে ৩১ মে নিজের কর্ম জীবন থেকে অবসর নেন। অবসর নেওয়ার সাথে সাথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে তার মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করেন এবং আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের নতুন কর্মজীবন শুরু করেন ২০২১ সালের ১ জুন।