নিজস্ব প্রতিবেদন : প্রতি বছরের মতোই চলতি বছর করোনা আবহেও ৭৪তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারতের প্রতিরক্ষা আরও মজবুত করার কথা। স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, দেশের প্রতিরক্ষার সাথে কোনরকম আপোষ করা হবেনা। তা সে ভারত পাকিস্তান বর্ডার (এলওসি) হোক, কিংবা ভারত চীন বর্ডার (এলএসি)। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারংবার আত্মনির্ভর দেশ গড়ার আহ্বান জানান।
আর এই দুয়ের মেলবন্ধনে অর্থাৎ আত্মনির্ভর ভারত এবং মজবুত প্রতিরক্ষার মেলবন্ধনে স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা চলাকালীন সেই গোটা এলাকাকে পাহারা দিলো ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-এর তৈরি অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম। নাম আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল (ইউএভি)।
আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল কি?
এই অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। এর আগেও প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন পরীক্ষামূলক ভাবে এই অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম মোতায়েন করা হয়েছিল। আকাশ পথে কোনো জঙ্গি সংগঠন ড্রোনের মাধ্যমে নাশকতার ছক কষলে সেই পরিকল্পনাকে ভেস্তে দিতে পারে এই অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম।নানান সময় এই সিস্টেমের দক্ষতা প্রমাণিত হয়েছে।
ইউএভির ক্ষমতা কতটা?
এই অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম আকাশপথে ২.৫ কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্য স্থির করতে পারে। আকাশে শত্রুপক্ষের কোনো ড্রোন দেখতে পেলে আকাশপথেই সেটিকে ধ্বংস করে দিতে পারে এই অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম। তবে শুধু এটুকুই নয়। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি অনুযায়ী, আকাশ পথে ৩ কিলোমিটার রেঞ্জের মধ্যে মাইক্রো-ড্রোনের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়ার ক্ষমতা আছে দেশীয় প্রযুক্তির এই অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেমের। এই অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেমে লেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তির কোনো ড্রোনকে আহত করার ক্ষমতা রাখে।
কেন এই অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম ব্যবস্থা? হঠাৎ অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম ব্যবহারের প্রয়োজন পড়লো কেন?
এবিষয়ে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এর কথায় গত কিছু মাস ধরে আকাশপথে ড্রোনের ব্যবহার বাড়িয়েছে জঙ্গিরা। পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলি ভারতীয় সেনা ক্যাম্পের উপর নজরদারি করার জন্য এবং উপত্যকা অঞ্চলে জঙ্গি ঘাঁটিতে অস্ত্র চালান করার জন্য এই ড্রোনগুলিকেই ব্যবহার করছে। মূলত পাঞ্জাব ও জম্মু কাশ্মীর সীমান্তে মা’দক ও অস্ত্র ড্রোনের সাহায্যে পাচার করাকে অভ্যেসে পরিণত করে ফেলেছে জঙ্গি সংগঠনগুলি।
বর্তমানে এই বিষয়ে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে ভারতীয় সেনা। ফলে সীমান্তে ড্রোনের আনাগোনা কিছুটা কমেছে, তবে তা এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এখনও কিভাবে অস্ত্র ভরে ড্রোনে ভারতীয় সীমান্তে পৌঁছানো যায় তার নানান রকম উপায় খোঁজার চেষ্টায় আছে তারা। এই সকল কারণেই পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলির এই বাড়াবাড়ি আটকাতে উন্নত প্রযুক্তি একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিল বলেই জানায় ডিআরডিও।
বর্তমানে সীমান্তে নজরদারি চালাচ্ছে নেত্র। এটি দেড় কিলোগ্রাম ওজনের ইউএভি যার রেঞ্জ আড়াই কিলোমিটার পর্যন্ত। এটি থার্মাল ক্যামেরা এবং বিশেষ যুমিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে যার ফলে দিনের আলোয় তো অবশ্যই, এমনকি রাতের অন্ধকারেও শত্রুপক্ষের ঘাঁটির ছবি তুলে আনতে পারে এটি।
বর্তমানে ডিআরডিও-র কাছে ‘অভ্যাস’ ড্রোনও রয়েছে, যা মূলত একটি হাই স্পিড এক্সপ্যানডেবল এরিয়াল টার্গেট (এইচইএটি)। যাতে অটোপাইলট সিস্টেম রয়েছে। এর সাহায্যে নিখুঁতভাবে লক্ষ্য স্থির করতে পারে এটি। এছাড়াও ডিআরডিও-র অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এসটাব্লিশমেন্ট (এডিই) তৈরি করেছে ‘লক্ষ্য’ ড্রোন যেটি হল হাইস্পিড টার্গেট ড্রোন। এটিও নিখুঁত ভাবে লক্ষ্য স্থির করতে সক্ষম।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন দিনের পর দিন ধরে দেশকে আত্মনির্ভর হওয়ার ডাক দিচ্ছেন সে সময় ভারতীয় প্রযুক্তিতে একের পর এক এমন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির আবিষ্কার সত্যিই প্রশংসনীয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।