নিজস্ব প্রতিবেদন : মানুষের জীবনে ভাগ্যের চাকা কখন ঘুরে যায় তা কারোর জানা নেই। ঠিক তেমনই জানা ছিল না বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের। তবে তিনি একজন মুদিখানার দোকানি থেকে বীরভূমের শেষ কথা। রাজনীতিতে কিভাবে পা রাখা অনুব্রত মণ্ডলের? চলুন দেখে নেওয়া যাক সেই প্রেক্ষাপট।
বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বর্তমানে বোলপুরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নিচুপট্টি এলাকার বাসিন্দা হলেও তার আদি বাড়ি নানুরের হাটসেরান্দি গ্রামে। তার প্রথম জীবন শুরু হয় সাধারণ মুদিখানার দোকান দিয়েই। তবে নানুরের সূঁচপুরের ঘটনার সময় তার কর্মকাণ্ড নজর কাড়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
অনুব্রত মণ্ডলরা তিন ভাই। যাদের মধ্যে তিনি হলেন মেজ। অনুব্রত মণ্ডল অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর আর পড়াশোনা করেননি। তারপর তিনি ব্যবসার জন্য বাবার মুদিখানায় বসতে শুরু করেন। মুদিখানার পাশাপাশি তাদের একটি গ্রিলের কারখানা রয়েছে, যেটিও দেখাশুনা করতেন তিনিই।
রাজনীতিতে অনুব্রত মণ্ডলের পা রাখা জাতীয় কংগ্রেসের হাত ধরে। জাতীয় কংগ্রেসের হয়ে কাজ করার সময়েই তার সাথে পরিচয় হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কারণ সেই সময় সংগঠনের একাধিক কাজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আসতে হতো বীরভূমে। অন্যদিকে অনুব্রত মণ্ডল ডাকাবুকো স্বভাবের হওয়ার কারণে সহজেই নজর কেড়েছিলেন জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপ্ত সহায়ক গৌতম বসুর মাধ্যমে তিনি আরও আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। ধীরে ধীরে এই অনুব্রত মণ্ডলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় কেষ্টতে পরিণত হন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ভেঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হলে অনুব্রত মণ্ডলও কংগ্রেস ছেড়ে চলে আসেন তৃণমূলে। আর তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হওয়ার পর বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি হন সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং যুব তৃণমূল সভাপতির দায়িত্ব পান অনুব্রত মণ্ডল। তবে অনুব্রত মণ্ডল ২০০১ সালে নানুরের সূঁচপুরের ঘটনার পরই সব থেকে বেশি বিশ্বাসভাজন হয়েছিলেন নেত্রীর। সেই সময়ই তিনি জেলায় বাম বিরোধী জোরালো আন্দোলন তৈরি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থা অর্জন করেছিলেন। এরপর আর রাজনীতির আঙিনায় অনুব্রত মণ্ডলকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
তৎকালীন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে দলের মতবিরোধের কারণে সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০৩ সালে তৃণমূল ছেড়ে দেন। আর এর পরেই এই দায়িত্ব পান অনুব্রত মণ্ডল। আর সেই যে দায়িত্ব পাওয়া তারপর থেকে টানা ১৮ বছর একচ্ছত্রভাবে নিজের আধিপত্য কায়েম রেখেছেন তিনি।
বাম আমলে বীরভূমের মতো লাল দুর্গে তিনি সমস্ত রকম বাধা বিপত্তি দূরে সরিয়ে নিজের সংগঠন তৈরি করেছেন। ২০১১ সালে বীরভূমের এই লাল দুর্গ তার হাত ধরেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায় এবং সবুজে পরিণত হয় বলে মত পোষণ করেন রাজনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা। এমনকি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টালমাটাল অবস্থাতেও অনুব্রত মণ্ডল নিজের গড় ঠিকঠাকই বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। এমনকি অনুব্রত মণ্ডলও একাধিকবার স্বীকার করেছেন তাকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি তা ফিরিয়ে দিয়ে বীরভূম নিয়েই থাকতে চেয়েছেন।
অনুব্রত মণ্ডল প্রথম থেকেই বোলপুরে স্ত্রী, মেয়ে এবং মাকে নিয়ে বাস করতেন। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তার মা প্রয়াত হন। এরপর আবার দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় তার স্ত্রী প্রয়াত হন ২০২০ সালে। বর্তমানে বোলপুরের ওই বাড়িতে তিনি এবং তার মেয়ে ও দলের কাজকর্ম নিয়েই তার বাস।
আর এই তৃণমূল নেতাই এখন জেলার রাজনীতিকে পার করে রাজ্য রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে তিনি আরও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছেন আয়কর দপ্তরের নোটিশে, গরু পাচার কাণ্ড, ভোট পরবর্তী হিংসায় সিবিআই তলবে। আর সব শেষে সিবিআইয়ের হাতে গরু পাচার কাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়ে।