নিজস্ব প্রতিবেদন : রিপাবলিক টিভির প্রধান অর্ণব গোস্বামীকে দুই বছরের এক পুরনো মামলায় গ্ৰেপ্তার করল মহারাষ্ট্র সরকার। অমিত শাহ সহ স্মৃতি ইরানি, প্রকাশ জাভরকরের মত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এই গ্ৰেপ্তারের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অনেকেই এই গ্ৰেপ্তারের ঘটনাকে ইন্দিরা গান্ধীর সময়কালের ইমারজেন্সির সঙ্গে তুলনা করছেন। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের উপর সরাসরি মহারাষ্ট্র সরকারের আঘাত বলেই দেখছে দেশের সংবাদ ও রাজনৈতিক জগৎ। যদিও মহারাষ্ট্র সরকার অর্ণব গোস্বামীর গ্ৰেপ্তারের ঘটনায় জানিয়েছে কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়।
ঘটনার সূত্রপাত মুম্বইয়ে সুশান্ত সিং রাজপুতের বিতর্কিত আত্মহত্যা ঘটনার পর। মুম্বই পুলিশ এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে ঘোষণা করে। যদিও রিপাবলিক টিভি প্রথম থেকে প্রচার চালাতে থাকে ‘জাস্টিস ফর সুশান্ত সিং’ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যে মুম্বই পুলিশ এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চাইছে। সুশান্ত সিংয়ের আত্মহত্যার পিছনে প্রতক্ষ্য বা পরোক্ষে ভাবে প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী ও রিয়া চক্রবর্তীর শক্তিশালী গোষ্ঠীর হাত আছে।
মহারাষ্ট্র সরকার ও রিপাবলিক টিভির লড়াইয়ে এরপর যুক্ত হয়ে পড়ে বিহার ও কেন্দ্রীয় সরকারও। লড়াই কোর্ট অবধি পৌঁছায়। সুশান্ত সিং রাজপুতের মামলার দায়িত্ব পায় সিবিআই।
সিবিআই তদন্তে উঠে আসে, সুশান্ত সিং রাজপুত আত্মহত্যাই করেছেন। সেই সঙ্গে ঘটনায় উঠে আসে বলিউডের সঙ্গে ড্রাগস জগতের যোগের কথা। ঘটনার মোড় অন্যদিকে নেওয়ার পরই
মহারাষ্ট্র সরকার দাবি তোলে রিপাবলিক টিভি টিআরপি বাড়ানোর জন্য অসৎ উপায় অবলম্বন করেছে। রিপাবলিক টিভি স্ট্রিং অপারেশন করে প্রমাণ করে দেয় মহারাষ্ট্র সরকার ষড়যন্ত্র করে এই মিথ্যা দাবি করছে। এরপরই মহারাষ্ট্র সরকার দুই বছরের এক পুরাতন মামলায় অর্ণব গোস্বামীকে গ্ৰেপ্তার করে।
কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ করে জানান, “কংগ্ৰেস এবং কংগ্ৰেসের জোট গণতন্ত্রকে নতুন করে লজ্জিত করেছে। রাজ্য সরকারের ক্ষমতাকে ভুলভাবে ব্যাবহার করে আক্রমণ করা হয়েছে অর্ণব গোস্বামী ও ব্যক্তির স্বাধীন মতামতকে সেই সঙ্গে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভকে।মুক্ত সংবাদপত্রের উপর এই আঘাত অবিলম্বে বন্ধ হোক।”
অর্ণব গোস্বামী জানিয়েছেন, “শারীরিক ভাবে তাঁর শ্বশুর, শ্বাশুড়ি পুত্র এবং স্ত্রীকে নিগ্ৰোহ করা হয়েছে এবং তাকে জোর জবরদস্তি করে পুলিশের ভ্যানে তোলা হয়েছে।”
অর্ণব গোস্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ৫৩ বছরের অন্বয় নাইক ও তাঁর মাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা। অন্বয় নাইক তাঁর আত্মহত্যার সুইসাইড নোটে অর্ণব গোস্বামীর নাম উল্লেখ করে জানান রিপাবলিক টিভি তাঁর পাওনা তাকে দিচ্ছে না। তিনি ওই সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। তার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
দুই বছর পর এই ঘটনাকে তুলে আনার পিছনে মহারাষ্ট্র সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠছে। কারণ অর্ণব গোস্বামীর বিরুদ্ধে এই আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার কোন প্রমাণ তখন পাওয়া যায়নি। সুশান্ত সিং রাজপুতকে নিয়ে মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে রিপাবলিক টিভি বিবাদে জড়ানোর পরই এই ঘটনা তুলে আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
অর্ণব গোস্বামী ২০০৬ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ‘টাইমস নাও’ ও ‘ইটি নাও’ এর ইডিটর ইন চিফ ছিলেন। কাজ করেছেন NDTV, The Telegraph চ্যানেল ও পত্রিকাতেও।
অর্ণব গোস্বামী ১৯৭৩ সালে আসামের গোয়াহাটিতে জন্মগ্ৰহণ করেন। অর্ণব গোস্বামীর বাবা মনোরঞ্জন গোস্বামী ১৯৬০ এর দশকে ভারতীয় সৈন্য বাহিনীর কর্ণেল ছিলেন। অবসরের পর তিনি ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৯৮ সালে গোয়াহাটি সংসদীয় এলাকা থেকে লোকসভা ভোকে দাঁড়ান। কিন্তু জয় পেতে ব্যর্থ হন। পরে জড়িয়ে পরেন লেখালেখির সঙ্গে। অর্ণব গোস্বামীর মা সুপ্রভা গোস্বামীও একজন লেখিকা। পিতামহ রঞ্জন গোস্বামী একজন নামকরা আইনজ্ঞ ছিলেন। মাতামহ গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য নির্বাচিত লেজিসলেটর কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার। অসম বিধান সভায় ছিলেন দীর্ঘদিন বিরোধী দলনেতা। অর্ণব গোস্বামীর মামা সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য ছিলেন গোয়াহাটি পূর্ব থেকে নির্বাচিত বিজেপির লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলীর সদস্য। ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন বিজেপির প্রধান। অর্ণব গোস্বামীর স্ত্রীও একজন সাংবাদিক।
অর্ণব গোস্বামীর সঙ্গে মহারাষ্ট্র সরকারের এই লড়াই মূলত পরিণত হয়েছে মহারাষ্ট্র ও কেন্দ্র বিজেপির সঙ্গে মহারাষ্ট্রে শিবসেনা জোটের। রিপাবলিক টিভি ও রিপাবলিক ভারতের খবর বিজেপি বিরোধী দল কংগ্ৰেস, এনসিপি, শিবসেনার বিরুদ্ধে অস্বস্থিকর ও রাজনৈতিক বিপদের সম্ভবনা তৈরি করছিল। বিজেপি সংবাদ চ্যানেলকে সামনে রেখে এটা করছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। তারই পাল্টা হিসাবে অর্ণব গোস্বামীকে ও তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে এমন অগণতান্ত্রিক উপায় আক্রমণ ও গ্ৰেপ্তার বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন।