আমফান আর নিসর্গের মধ্যে কার দাপটে বেশি ক্ষতি হতে পারে

Madhab Das

Published on:

নিজস্ব প্রতিবেদন : দেশ জুড়ে বাড়তে থাকা করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে চলতে থাকা লকডাউনের তার মাঝেই সুপার সাইক্লোন আমফানের দাপটে লন্ডভন্ড হয়েছে বাংলা ও ওড়িশা। এখনও বাংলার বুকে সেই ক্ষত তাজা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখনও লাখ লাখ মানুষ ঘরছাড়া। অন্যদিকে আবার পঙ্গপাল। মাথায় হাত ভারতের লাখ লাখ কৃষকের। এমন পরিস্থিতিতেই আবার ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ।

ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ। তবে এবার বঙ্গোপসাগরে নয়, আরব সাগরের বুকে তৈরি হয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়। মহারাষ্ট্রের উপকূলে আছড়ে পড়ল নিসর্গ। ঘূর্ণিঝড় নিসর্গের দাপটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে মুম্বই-সহ গুজরাত, দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন দিউ-এ। রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে এই সমস্ত এলাকায়। পাশাপাশি গোয়ায় জারি হয়েছে ভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা।

এই ঘূর্ণিঝড়ের জন্য কেরল, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট উপকূলের মৎস্যজীবিদের ইতিমধ্যেই সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে এবং তার সাথেই  মহারাষ্ট্র ও গুজরাট উপকূলে জারি হয়েছে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

এই ঝড়ের গতিবেগ থাকতে পারে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। পরের দিনও এর প্রভাব থাকবে বলে জানানো হচ্ছে। এর প্রভাবে গোয়া, মহারাষ্ট্র, কেরল ও গুজরাটে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হওয়া হওয়ার কথা জানাচ্ছে আবহাওয়া দপ্তর।

ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে আরব সাগরে উৎপন্ন হয়ে উত্তর দিকে যাবে এই ঘূর্ণিঝড়। তারপর গতিপথের পরিবর্তন ঘটিয়ে উত্তর পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে মহারাষ্ট্রের উত্তর দিক এবং গুজরাটের দক্ষিণে সমুদ্র উপকূলের মাঝে হরিহরেশ্বরে এই ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ আছরে পড়তে পারে। এর ফলে গোয়া ও কেরল, দমন ও লাক্ষাদ্বীপে প্রভাব পড়বে।

আমফান না নিসর্গ, কে বেশি শক্তিশালী?

আমফানের ভয়াবহতা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মনে একটি ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। রীতিমত ধ্বংস হয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। শহর কলকাতাকে থামিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল এই ঘূর্ণিঝড়ের। বঙ্গোপসাগরে উৎপন্ন হওয়া আম্ফানে হওয়ার সর্বোচ্চ গতি ছিল ১৬০ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। সর্বোচ্চ গতি ২৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখা গেছে আমফানে।

নিসর্গের ক্ষেত্রে হওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে আমফানের তুলনায় নিসর্গের শক্তি অনেকটা কম। তবে একদম তুচ্ছ নয় এই ঘূর্ণিঝড়। মহারাষ্ট্র উপকূল ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রস্তুত নয়, এটি যথেষ্ট বিরল ঘটনা। তাই গতিবেগ কম হলেও ক্ষয়ক্ষতি যথেষ্ট পরিমাণে হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইতিমধ্যেই যেসব এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা আছে সেখান থেকে ১৯ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিম্ন উপকূলবর্তী এলাকা থেকেই বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গোয়া এবং মুম্বইয়ের ডপলার র‍্যাডার থেকে ক্রমাগত নজর রাখা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের দিকে। র‍্যাডারে জানা গিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের চোখের পরিধি প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। তবে ল্যান্ডফলের সময় সেই পরিধি কিছুটা কমবে। যদিও ল্যান্ডফলের পর ঝড়ের গতি কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।

মুম্বইয়ে মেরিন ড্রাইভে গাড়ির যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বন্ধ রাখা হয়েছে বিমান পরিষেবা এবং বেশ কিছু ট্রেনও বাতিল করা হয়েছে। ল্যান্ডফলের সময় প্রায় সাড়ে ৬ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস দেখা যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্র ও গুজরাতের উপকূলবর্তী এলাকায় ৩০টির বেশি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল তৈরি রাখা হয়েছে।

এক একটি দলে ৪৫ জন করে কর্মী রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর তরফে একটি কন্ট্রোল রুম তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। সেনা, বায়ুসেনা, নৌবাহিনীকে আইএমডির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। আইএমডির পূর্বাভাস অনুযায়ী কাজ করতে বলা হয়েছে তাদের। ইতিমধ্যেই গুজরাত সরকারও উপকূলবর্তী ৪৭টি গ্রাম থেকে ২০ হাজারের মতো গ্রামবাসীকে সরিয়ে এনেছে। উপকূলরক্ষী বাহিনীর জাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। সমুদ্রে যাওয়া মৎস্যজীবীদের নৌকো ও মার্চেন্ট নেভির জাহাজদের ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলায় কি নিসর্গের প্রভাব পড়বে?

এই ঘূর্ণিঝড় আরব সাগরে তৈরি হওয়ার ফলে বাংলায় এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব তেমন একটা পড়বে বা। তবে বুধ ও বৃহস্পতিবার হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে হওয়া অফিস।