চিনকে কড়া জবাব দিতে প্রস্তুত ভারতের একাধিক আধুনিক যুদ্ধবিমান, রইলো তালিকা

নিজস্ব প্রতিবেদন : লাদাখের দুর্গম গালওয়ান উপত্যকায় চীনের পূর্ব পরিকল্পনায় প্রাণ গেছে ২০ জন ভারতীয় ভারতীয় সেনার। সীমান্তে যুদ্ধে এই প্রথম পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের বিরুদ্ধে দুটো ফ্রন্টে নামতে হচ্ছে ভারতকে। প্রকাশ্যে এসেছে লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশের এই দীর্ঘ সীমারেখায় চীন প্রয়োগ করতে চাইছে ফাইভ ফিঙ্গার নীতি। ভারতও তার প্রতিরোধে এই দুর্গম এলাকায় গড়ে তুলতে চাইছে স্ট্রাটেজিক পয়েন্টে, উন্নত পরিকাঠামো। যা প্রতিদিন বাড়িয়ে তুলেছে সীমান্ত উত্তেজনা। যার ফলে সম্ভবনা তৈরি হয়েছে যুদ্ধের। যদি যুদ্ধ লাগে তাহলে এই দুর্গম পার্বত্য গিরিখাত এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বিমান বাহিনী।

ইতিমধ্যে উপগ্ৰহ চিত্রে ধরা পড়েছে লাদাখ সীমান্তের নানা জায়গায় চীনা বায়ুসেনার তৎপরতা। তিব্বতে চীন গড়ে তুলেছে এয়ারবেস। আক্রমণ আসতে পারে সেখান থেকে। এই শক্তিশালী চীনা বিমানবাহিনীর সঙ্গে ভারতের বিমান বাহিনী কি মোকাবিলা করতে সক্ষম! পরিসংখ্যান বলছে নব্বইয়ের দশকের পর থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার লাগাতার আধুনিকীকরণ ঘটনা হয়েছে। শুধু চীন কেন, বিশ্বের যেকোনো শক্তিশালী দেশগুলির সঙ্গে আকাশ সহ স্থলে, জল যুদ্ধে সমানে সমানে মোকাবিলা করতে সক্ষম ভারতীয় বায়ু সেনা। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্সে বা তালিকায় চীন ও ভারত রয়েছে পাশাপাশি।

সামরিক অস্ত্র ভান্ডারের বিচারে চীন ও ভারতের স্থান উনিশ-বিশ। দুর্গম এই এলাকায় বায়ুসেনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। ভারতীয় বায়ুসেনার ভান্ডারে যেসব যুদ্ধ বিমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে সেগুলি হল –

সুখোই ৩০ এমকেআই : রাশিয়ার ২৭২টি এই যুদ্ধ বিমান আছে ভারতের। আরও ১২ টি সুখোই ফাইটার জেট রাশিয়ার কাছ থেকে কিনবে ভারত। দুই আসনের ডবল ইঞ্জিন এই কমব্যাট ফাইটার জেট ৮০০০ কিলোগ্ৰাম ওজনের যুদ্ধাস্ত্র বহন করার ক্ষমতা রাখে। মাঝারি পাল্লার এয়ার টু এয়ার মিসাইল, সেমি অ্যাকটিভ রেডার বা ইনফ্রারেড ক্লোজ রেঞ্জ বয়ে নিয়ে ঘন্টায় ২৫০০ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারে এই সুখোই বিমান। এর আধুনিকীকরণ ঘটিয়ে সুপারসনিক ব্রহ্মস মিসাইল ছোড়ার প্রযুক্তি কৌশল আয়ত্ব করেছে ভারত। ডবল ইঞ্জিনের এই ভ্যারিয়েন্ট তৈরি টাইটানিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম অ্যালয় দিয়ে। এই ফাইটার জেটে আছে ক্যানারড নামে অতিরিক্ত দুটো ডানা। এর থ্রাস্ট ভেক্টর কন্ট্রোল বিমানের অভিমুখ নিয়ন্ত্রণে খুব দক্ষ। থ্রাস্ট-ভেক্টরিং এর সুবাদে কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এত দ্রুত এগিয়ে যায় সুখোই ৩০ যে তাকে তাড়া করে ধ্বংস করা পুরনো ফাইটার জেটের পক্ষে সম্ভব নয়।

মিরাজ ২০০০ ফাইটার জেট : ভারতীয় বায়ুসেনার অন্যতম যুদ্ধাস্ত্র মিরাজ ২০০০ ফাইটার জেট। ফ্রান্সের দাসো এভিয়েশন মাল্টিরোল সিঙ্গল এই ইঞ্জিনের নির্মাতা। ১৯৮৫ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে মিরাজ ২০০০ কেনে ভারত। বোমারু বিমান বহনকারি এই বিমানের প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করে ভারত। এই বিমান একদিকে যেমন আকাশে অন্য বিমানের সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধ করতে সক্ষম, তেমনি নিঁখুত আঘাত হানতে পারে মাটিতে থাকা লক্ষ্য বস্তুকে। এর গতিবেগ ঘন্টায় ২৩৩৬ কিলোমিটার। ৭৫০০ কিলোগ্ৰাম ওজনের এই ফাইটার জেট ১৭,০০০ কিলোগ্ৰাম ওজন নিয়ে আকাশে উড়তে সক্ষম। ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট ও লেসার নিয়ন্ত্রিত বোমা পরিবহন ও নিক্ষেপণ করতে পারে এই মিরাজ। ২০০০।

মিগ ২৯ ফাইটার জেট : মিগ ২৯ রাশিয়ার তৈরি। দুটি ইঞ্জিন ও এক আসনের যুদ্ধ বিমান ২৪৪৫ কিমি গতিবেগে ঘন্টায় ছুটতে পারে। ৬৫টি মিগ ২৯ বিমান ভারতের হাতে আছে। প্রস্তুতি চলছে আরও ২১টি কেনার। তিন স্কোয়াড্রন মিগ ২৯ বিশ্বের যেকোনো যুদ্ধ বিমানকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। নৌবাহিনীর হাতেও আছে মিগ ২৯ এর ন্যাভাল ভার্সন। ৪ টি আর-৬০ ক্লোজ কমব্যাট ও দুটি আর-২৭ মাঝারি পাল্লার রেডার গাইডেড মিসাইল বয়ে নিয়ে যেতে পারে মিগ ২৯।

মিগ ২১ বাইসন জেট : একটি মাত্র ইঞ্জিন ও এক আসনের মাল্টিরোল এয়ারক্রাফ্ট মিগ-২১ রাশিয়ার তৈরি। ভারতের আছে ৬০ টি বাইসন জেট। গতিবেগ প্রতি ঘন্টায় ২২৩০ কিলোমিটার। ২৩ এমএম দুটি ব্যারালযুক্ত কামান ও চারটি আর ৬০ ক্লোজ কমব্যাট মিসাইল রয়েছে এই ফাইটার জেটে। অতিরিক্ত ৪ হাজার কিলোগ্ৰাম অস্ত্র বহন করতে পারে।

তেজস : ভারতের তৈরি দেশীয় প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান। শব্দের থেকেও দ্রুতগামী। ডবল ইঞ্জিন, মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট পৃথিবীর সবথেকে হালকা যুদ্ধবিমান তেজস। ৯ টন অবধি ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম এই তেজস। তেজস শত্রুপক্ষের নজরদারি বাইরে থেকেও নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এর ভ্যারিয়েন্টের অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড রেডার AESA লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করতে পারে আকাশ, জল ও স্থল থেকে।

রাফাল : রাফাল হল মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট। মিসাইল নিক্ষেপ, যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করা উঁচু থেকে হামলা করতে পারে রাফায়েল। ভারতের হাতে আছে এই মুহূর্তে ৪টি শক্তিশালী রাফায়েল।

জাগুয়ার ফাইটার জেট : দুটি ইঞ্জিনের এক আসন বিশিষ্ট ডিপ পেনিট্রেশন স্ট্রাইক যুদ্ধবিমান ১৩৫০ কিমি প্রতি ঘন্টায় উড়তে পারে। অতিরিক্ত ৪৭৫০ কিলোগ্ৰাম ওজনের বোমা বা জ্বালানি বইতে পারে। ভারতের হাতে ১১০টি জাগুয়ার ফাইটার জেট আছে।

নেত্র : নেত্রর কাজ নজরদারি করা। ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ারবরণ আর্লি ওয়ারনিং অ্যান্ড কন্ট্রোল এয়ারক্রাফ্ট। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি নেত্র আগাম বিপদ সংকেত পৌঁছে দিতে পারে। এই শক্তিশালী রেডার পেরিয়ে ভারতের আকাশসীমায় পৌঁছাতে পারবেনা শত্রু ফাইটার জেট বা মিসাইল সিস্টেম। বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের সময় শত্রুঘাঁটির খবর নিয়ে আসতে সক্ষম হয় নেত্র বিমান। ইনফারেড রশ্মি শনাক্ত করতে পারে নেত্র।

চিনুক ও অ্যাপাচে কপ্টার : ভারতের বায়ু সেনার হাতে আছে আমেরিকার তৈরি উন্নত প্রযুক্তির চিনুক সিএইচ-৪৭ আই হেলিকপ্টার। যুদ্ধের যাবতীয় প্রয়োজনীয় উপকরণ বহন করতে পারে এই কপ্টার। এতে রয়েছে নোজ মাউন্টেন সেন্সর স্যুট ও নাইট ভিশন মোড। এটি চার ব্লেডের অত্যাধুনিক অ্যাপাচে গাইডেড হেলিকপ্টার। এর গতিবেগ ঘন্টায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার।
এম আই-২৫, এম আই-৩৫ এটি দুই ইঞ্জিনের টার্বোশেট অ্যান্টি আর্মার হেলিকপ্টার। এর নোজ বারবেটে থাকে ১২.৭ এমএম রোটারি গান। এতে রয়েছে স্করপিয়ন অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিসাইল ঘন্টায় গতিবেগ ৩১০ কিমি। ১৫০০ কেজি পর্যন্ত অতিরিক্ত ওজন বহন করতে পারে।

পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাধীনতার পর থেকে সীমান্ত যুদ্ধ লড়ে চলেছে ভারত। তার ফলে চীনের দিকে সেভাবে নজর দিতে পারেনি ভারত। লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় এই নতুন পরিস্থিতি চীন সীমান্তে ছায়া যুদ্ধের সূত্রপাত করল। চীনের সামনে সম্পূর্ণ প্রস্তুত কি ভারত। অপরিক্ষিত দুর্গম উপত্যকার যুদ্ধে ভারতের বায়ুসেনা চীনকে মোকাবিলা করতে এখন সম্পূর্ণ সক্ষম বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।