সদ্য পাশ হওয়া কৃষি বিল কি? কেন এই বিলের বিরোধীতায় বিরোধীরা

Madhab Das

Published on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কার আনার জন্য গত ৫ই জুন কেন্দ্র কিছু পদক্ষেপ নেয়। সেগুলি আইনে পরিণত করার জন্য লোকসভা ও রাজ্যসভায় পেশ করে কেন্দ্র সরকার। যা নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক আন্দোলন।

Advertisements

এর আগে কৃষি বিল নিয়ে বিজেপির শরিক দল অকালি দল তীব্র বিরোধিতা জানায়। এডিএমকে, জেড-ইউ ও ওয়াইএসআর ছাড়া দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল কৃষি বিল নিয়ে বিরোধীতায় নেমেছে। তাদের অভিযোগ এই বিলে সরকারের হাত কৃষকদের মাথার উপর থেকে সরে যাবে এবং কৃষির পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে বড়ো বড়ো ব্যবসায়ীদের হাতে।

Advertisements

যদিও রাজ্য সভায় এই কৃষি বিল পাশ হতেই প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, আগের মতোই সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনবে। তবে কৃষকরা চাইলে বেশি দামে তাদের ফসল বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু দেশের কৃষক মহলে কৃষি বিল নিয়ে ৩ টি আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

Advertisements

এই কৃষি বিল কি? এই কৃষি বিল নিয়ে সরকার ও বিরোধীদের বিরোধ কেন?

কৃষি সংক্রান্ত যে তিনটি বিল লোকসভা পাশ হয় সেগুলি হল

১) কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন। এতে কৃষিপণ্য নিয়ে যে এপিএমসি আইন আছে তা দূর করে আন্তঃরাজ্য কৃষিপণ্যের বাণিজ্য অবাধ করা।

২) অত্যাবশ্যক পণ্য আইন। এতে নির্দিষ্ট কিছু কৃষিপণ্য মজুত রাখার উর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

৩) কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত রাখতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন চুক্তি। এই বিলে রাজ্যগুলিতে চুক্তি ভিত্তিক চাষ ব্যবস্থা আইনসিদ্ধ করা।

এর মধ্যে কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন ও কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত রাখতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন রাজ্যসভায় ধ্বনি ভোটে পাশ হয়।

এই দুটো বিল সব বিরোধী দল আপত্তি জানিয়েছে। সরকারের দাবি এই বিলে দেশে নতুন ধরনের কৃষি ব্যবস্থা কৃষি ও কৃষকদের কথা মাথায় রেখে আনা হয়েছে।

১) যেমন মান্ডির বাইরে কৃষকরা বেশি দামে তাদের ফসল বিক্রি করতে পারবে।

২) যাকে ইচ্ছা তাকেই ফসল বিক্রি করতে পারবে।

৩) প্রান্তিক কৃষকেরা সরাসরি খুচরো ব্যবসা ও বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।

৪) আন্তঃরাজ্য ব্যাবসায় কষি পণ্য আদান-প্রদান করতে পারবে।

৫) কৃষি সংক্রান্ত যা কিছু চুক্তি হবে তা উৎপাদিত পণ্যের বিক্রি নিয়ে, জমি নিয়ে নয় তাই ভয়ের কিছু নেই।

৬) মান্ডির বাইরে যে ফসল বিক্রি হবে তার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ওই কেনাবেচার উপর কোন কর বসাতে পারবে না।

কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগগুলি হলো

১) ফসলের দাম কৃষকরা ঠিক করতে পারবে না। এই দামের নিয়ন্ত্রণ দালাল ও ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাবে। যার ফলে কৃষক দাম চাইলেও নায্য দাম পাবে না।

২) পুরো কৃষি ব্যবস্থা চলে যাবে ব্যবসায়ীদের হাতে। ফসল উৎপাদন থেকে বিক্রি নিয়ন্ত্রণ থাকে ব্যবসায়ীদের হাতে।

৩) কৃষিপণ্যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বড়সড় বিপদ আনতে পারে কৃষকদের জীবনে। কারণ দেশের এখনও অধিকাংশ কৃষকের এই বিদেশি বিনিয়োগ সম্বন্ধে কোন ধারণা নেই। আর এই বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ নিতে পারে দেশের এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা।

৪) এছাড়াও ভারতের কৃষি ভান্ডার পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় মান্ডি ট্যাঙ্ক চালু আছে। মান্ডি ট্যাঙ্কের প্রচুর ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ কৃষক না চাইলে মান্ডিতে এখন ফসল নাও বিক্রি করতে পারেন। ফলে ফসল‌ বিক্রির ক্ষেত্রে কমিশন এজেন্টরা থাকতে পারছেন না। ফলে দুই রাজ্যের কমিশন এজেন্টরা বড়সড় বিপদের মধ্যে পড়বেন।

কেন্দ্র ও বিরোধীদের এই রাজনৈতিক লড়াইয়ে এখন দেখার এই কৃষি বিল সত্যিই দেশের কৃষিক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পারে কিনা।

Advertisements