শিক্ষা ব্যবস্থায় আসছে যেসকল পরিবর্তন, সহজ ভাষায় কেন্দ্রের নতুন শিক্ষানীতি

Madhab Das

Published on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : দেশের সামগ্রিক শিক্ষার মানকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির প্রস্তাব রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। ১৯৬৪ সালে দেশে প্রথমবার এই ধরনের শিক্ষানীতির কথা ভাবা হয়েছিল। ১৯৬৮ সালে আনা হয়েছিল নতুন শিক্ষানীতির প্রস্তাব। যে প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাশও হয়েছিল। ১৯৬৮ সালের পর ১৯৮৬-তে ফের নতুন শিক্ষানীতি এনেছিলেন রাজীব গান্ধী। পরে আবার সেই নীতিকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছিল ১৯৯২ সালে প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওয়ের হাত ধরে। আর এসবের পর তৃতীয় দফায় নতুন শিক্ষানীতির প্রস্তাব আনলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তত্বাবধানে কেন্দ্র সরকার।

Advertisements

Advertisements

বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী, নতুন এই শিক্ষা নীতির ফলে পড়ুয়াদের বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করতে সুবিধা হবে। এই নতুন শিক্ষানীতিতে স্নাতক স্তরের আগেই ৪ বছরের মাল্টিডিসিপ্লিনারি কোর্স পড়তে হবে পড়ুয়াদের। মনে করা হচ্ছে এর ফলে পড়ুয়াদের বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় অনেক বেশী বিকল্প বাড়বে। শুধু তাই নয়, মনে করা হচ্ছে এর ফলে বোর্ডের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের চাপ কমবে। নতুন শিক্ষানীতিতে একদিকে যেমন সিলেবাসের চাপ কমবে তেমনই শিক্ষার্থীদের ধারণা পরিষ্কার করার দিকে জোর দেওয়া হবে।

Advertisements

নতুন শিক্ষানীতি কারণে যেসব পরিবর্তন আসছে

এর আগের শিক্ষানীতি অনুযায়ী স্কুল শিক্ষার ক্ষেত্রে ছিল ১০+২ (মাধ্যমিক+উচ্চ মাধ্যমিক) পদ্ধতি। কিন্তু এবার সেই পদ্ধতির বদলে হবে ৫+৩+৩+৪। বাচ্চাদের শিক্ষার প্রথম পাঁচ বছর অর্থাৎ ৩ থেকে ৮ বছর বয়স প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা চলবে। পরবর্তী তিন বছর অর্থাৎ ৮ থেকে ১১ বছর বয়স পর্যন্ত প্রিপেরাটরি স্টেজের শিক্ষা দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের। তার পরের তিন বছর অর্থাৎ ১১ থেকে ১৪ বছর শিক্ষার মধ্যবর্তী পর্যায় বা মিডল স্টেজ চলবে। এর পরবর্তী চার বছর ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়স স্কুল শিক্ষার শেষ ধাপের পঠনপাঠন চলবে।

প্রি স্কুলিং : বর্তমানে পড়ুয়াদের ৫ বা ৬ বছর বয়সে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হতে হয় এবং তার আগে নিজেদের মতন করে প্লে স্কুল বা প্রি স্কুলিং করানো হয়। এই প্রি স্কুলিংয়ের বিষয়টি আগে স্কুলের ওপর নির্ভরশীল ছিল কিন্তু এখন সম্পুর্ণ বিষয়টিই সরকারের অধীনে থাকবে এবং তাদের জন্যও স্কুলে মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করা হবে।

মাতৃভাষা বাধ্যতামূলক : নতুন শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে সব মাধ্যমের স্কুলেই শুরু থেকে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত মাতৃভাষা পড়ানো বাধ্যতামূলক করা হবে। তবে অভিভাবকদের দুজনের ক্ষেত্রে ভাষা দুরকম থাকলে বা কোনো শিক্ষার্থীকে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে বদলি হতে হলে তারা মাতৃভাষা হিসেবে কোন ভাষা শিখবে সেই বিষয় স্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। মা বাবার দুজনের ভাষা দুরকম হলে বাচ্চাকে দুরকম ভাষাই শেখানোর চেষ্টা করতে হবে। যাদের ট্রান্সফার চাকরি বা মা-বাবা বহুভাষিক (তামিল-বাঙালি) তাঁদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ভাষার বিধান দেওয়া নেই এই নতুন শিক্ষা নীতিতে।

স্কুল জীবন থেকে গবেষণার সুযোগ : নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী স্কুল জীবনের শেষ চার বছরের সেকেন্ডারি কোর্সে পড়ুয়ারা গবেষণার সুযোগ পাবেন। যার ফলে প্রতিটি বিষয়ে পুঁথিগত জ্ঞানের বদলে গভীর জ্ঞান সংগ্রহ করতে পারবেন। এমনভাবে এই ব্যবস্থা করা হবে যাতে স্নাতক স্তরে পড়ুয়াদের কাছে বিষয়টির প্রতি যথেষ্ট জ্ঞান থাকে এবং স্নাতক স্তরে পড়ুয়ারা সরাসরি রিসার্চ প্রোগ্রাম শুরু করার সুযোগ পান। বিশেষজ্ঞদের মতে এর ফলে শিক্ষার ক্ষেত্রে একমুখী ধারা ভাঙতে শুরু করবে।

এম ফিলের গুরুত্ব হ্রাস : বর্তমানে পিএইচডি করার জন্য এম ফিল করতে হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষা নীতিতে অনুযায়ী এম ফিলের সার্বিক গুরুত্ব কমবে। পড়ুয়ারা মাস্টার্সের পরে সরাসরি পিএইচডি শুরু করতে পারবেন। তবে শুধু ভারতেই নয় বিশ্ব বাজারে এম ফিলের চাহিদা ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে।

বিদেশি ক্যাম্পাস : বিশ্বের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়েকে বেছে নেওয়ার কাজ শুরু হবে এই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে। ইনস্টিটিউট অফ এমিনেন্স স্ট্যাটাস রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়কেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। ২০১৩ সালে ইউপিএ সরকার একই ধরনের বিল এনেছিল। যেখানে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ইয়াল, কেমব্রিজ, এমআইটি, স্ট্যান্ডফোর্ড, এডিনবার্গ, ব্রিস্টলের মতো বিশ্ববিদ্যালয়কে ভারতে ক্যাম্পাস খোলার ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময় ভারতে নিজেদের ক্যাম্পাস খোলার কোনও ইচ্ছাপ্রকাশ করেনি এই সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলি।

সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া : নতুন শিক্ষা নীতির পদ্ধতি বেশ সময়সাপেক্ষ। অনেকগুলি ধাপ পেরোতে হবে এই শিক্ষানীতি প্রয়োগ করার জন্য। প্রতিটি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রক যখন মনে করবে যে তাদের রাজ্যে এই কাঠামো প্রয়োগের যথেষ্ট সুবিধা আছে তখনই এই নীতি প্রয়োগ করা হবে। মনে করা হচ্ছে এই সম্পূর্ণ বিষয়টি চালু হতে সময় লাগতে পারে ২০৪০ সাল পর্যন্ত। এছাড়াও এই নীতি চালু করার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত অর্থ।

Advertisements