নিজস্ব প্রতিবেদন : আশ্চর্য্য ভারতে কত কিছু না আশ্চর্য্য। এত আশ্চর্য্য হয়তো সারা বিশ্বেও কোথাও নেই। কিন্তু সেই সকল সমস্ত আশ্চর্যের ঘটনা অনেকেরই অজানা। এই সকল আশ্চর্যগুলির মধ্যে হয়তো শুনেছেন আশ্চর্য সব জায়গায় হিন্দু দেবদেবীদের মন্দিরের উৎপত্তির কথা। কিন্তু মাঝ সমুদ্রে ডুবে থাক মন্দিরের কথা কখনও শুনেছেন? বোধ হয় শোনেননি, মাঝ সমুদ্রে মন্দিরে রয়েছে শিব, এমনই শিব মন্দির রয়েছে ভারতে। গুজরাত থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে আরব সাগরের মধ্যেই রয়েছে ভগবান শিবের এই মন্দিরটি।
স্থানীয়ভাবে এই মন্দিরটি নিষ্কলঙ্ক মন্দির নামেই বেশি পরিচিত ও বিখ্যাত। লোকমুখে কথিত আছে যে, এই মন্দিরে শিবের কাছে নাকি যা চাওয়া হয় তাই পাওয়া যায়। ফলে প্রত্যাশার আশায় ভিড় বাড়ছে দিনের পর দিন বাবার দরবারে।
মন্দিরটির চারিদিকে শুধু সমুদ্র আর সমুদ্র! এর ঠিক মাঝখানে একটুখানি জমির উপর তৈরি হয়েছে এই মন্দির। কিন্তু সমুদ্রের মাঝখানে হওয়ায় পূর্নার্থীরা সবসময় এই মন্দিরে চাইলেই যেতে পারেন না। ভগবান শিবের দর্শন করতে হলে দুপুর ১টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে আসতে হয়। কারণ, অন্য সময় জলের তলায় থাকে এই মন্দিরের প্রবেশ পথ। কোনও এক আশ্চর্য কারণে দুপুর ১টা থেকে রাত্রি ১০টা পর্যন্ত প্রবেশ পথে সমুদ্রের জল আসে না।
তখনই দর্শনার্থীরা সেই মন্দিরে পায়ে হেঁটে প্রবেশ করতে পারেন, পুজো দিতে পারেন। জোয়ারের সময় মন্দিরটি আবার জলের তলায় চলে যায়। জলে ঢুবে থাকা অবস্থায় শুধুমাত্র মন্দিরের ২০ ফুট লম্বা পাথরের তৈরি থামটির উপরের অংশ ও মন্দিরের ধ্বজাটি দেখা যায়। প্রতিদিন দুপুর ১টার পর মন্দিরের উপর থেকে জল নামতে শুরু করে এবং দর্শনার্থীরা একে একে আসতে শুরু করেন।
এই মন্দিরকে ঘিরে লোকমুখে অনেক ইতিহাস রয়েছে। যেমন কেউ বলেন, বাবা নাকি খালি হাতে কাউকে ফেরান না। আবার কেউ বলেন বাবার দেখা পাওয়া নাকি সৌভাগ্যের ব্যাপার। যাই হোক লোকমুখে প্রচলিত এই মন্দিরটি নাকি পান্ডবদের সময়ে তৈরি হয়েছিল। যদিও এনিয়ে অনেক ভিন্নমতও আছে। কথিত আছে মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরে কৌরব ও অন্যান্যদের হত্যা করার পাপ ধুতে এখানেই পুজো দেন পঞ্চপাণ্ডব। ভাদ্র মাসের পূর্ণিমায় এখানে পুজো দিতে মবু মানুষের আগমন হয়। অনেকেই মৃত আত্মীয়ের অস্থি বিসর্জন করেন এখানে।
আবার ভিন্ন লোকমুখে শোনা যায়, ভগবান কার্ত্তিক নাকি এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারকাসুরকে হত্যা করার পর ভগবান কার্ত্তিকের মনে নাকি অনুশোচনার জন্ম হয়। আর নিজের অনুশোচনা দূর করতে তিনি বেছে নেন পিতা শিবের আরাধনার পথ। তারপরই তিনি এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।
এই মন্দিরটির বিশেষত্ব হল, কেবল ভাটার সময়ই মন্দিরের শিব লিঙ্গটির দেখা মেলে। জোয়ারের সময় তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাই এই মন্দিরটিকে বলা হয় “মহাদেবের অদৃশ্য মন্দির”
এই মন্দির দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে গুজরাতের ভাবনগর জেলায় আরব সাগরের তীরে কোলিয়ক গ্রামে। এখানেই সমুদ্রের মধ্যে ১.৫ কিলোমিটার গেলে তবে দেখা পাওয়া যায় এই মন্দিরের। অদ্ভুত এই শিব মন্দিরের নাম নিষ্কলঙ্ক মহাদেব মন্দির।