জঙ্গলের মাঝে কালিই দুর্গা-অন্নপূর্ণা, বেহিরা কালিতলার অজানা কাহিনী

Himadri Mondal

Updated on:

হিমাদ্রি মণ্ডল : প্রতিবছর ত্রয়োদশীতে বীরভূমের সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত পুরন্দরপুরের বেহিরা কালীতলায় ঐতিহ্যবাহী নিম্ববাসিনী মায়ের পুজো হয় মহা ধুমধামে। এই নিম্ববাসিনী মায়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এখানকার মা দুর্গা পুজোর সময় দুর্গা, অন্নপূর্ণা, কালি এবং অন্যান্য রূপে পূজিত হন। আর এই বছরের পর বছর ধরে চলে আসা প্রথাকে ঘিরেই ত্রয়োদশীতে বসে মেলা, নানান অনুষ্ঠান ইত্যাদি। যদিও চলতি বছর করোনা আবহে বাতিল হয়েছে বেশিরভাগ অংশ, কেবলমাত্র রীতিটুকু বজায় রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন মন্দিরের দায়িত্বে থাকা সদস্যরা।

নিম্ববাসিনী বেহিরা কালীর ইতিহাস

পুরন্দরপুরের এই বেহিরা কালী মন্দির সম্পর্কে লোকমুখে নানান মত রয়েছে। লোকমুখে জানা যায়, কয়েক শতাব্দী আগে অষ্টাবক্র মুনি মা অন্নপূর্ণাকে সঙ্গে নিয়ে কাশি থেকে বক্রেশ্বরের দিকে যাচ্ছিলেন বক্রেশ্বর নদী ধরে। অষ্টাবক্র মুনির উদ্দেশ্য ছিল বক্রেশ্বরে মাকে প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু এই যাওয়ার পথে বর্তমান পুরন্দরপুর বেহিরা গ্রামে নৌকা আটকে যায় জলের অভাবে।

ওই সময় আবার ওই গ্রামে তপস্যা করছিলেন ভরদ্বাজ মুনি। আর সেই মুনির আহ্বানে দেবী অন্নপূর্ণা কালী রূপে বসে যান একটি নিমগাছের তলায়। তারপর তিনি সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হলেন, নাম হল নিম্নবাসিনী কালী। আর এই কালী মায়ের নিত্যসেবা শুরু করলেন ভরদ্বাজ মুনি।

অন্যদিকে কবি তুলসীদাস গোস্বামীর রামচরিত মানসে এক জায়গায় উল্লেখ রয়েছে ‘ভরদ্বাজ মুনি বসতি প্রয়াগা’। আর এই উল্লেখ্য অনুযায়ী যে সকল উদাহরণ পাওয়া যায় তার সাদৃশ্য রয়েছে বেহিরা গ্রামে। চারিদিক গভীর ঘন জঙ্গল, নানান ধরনের জানা-অজানা গাছের সমাবেশ। কোথাও কোনো রকম কোলাহল নেই। এমনকি বর্তমান পরিস্থিতিতেও এই এলাকায় এমন নির্জনতা চোখে পড়ে।

এখানে ভরদ্বাজ মুনি এবং অষ্টাবক্র মহাদেবের দুটি মন্দির রয়েছে। যে দুটি মন্দিরের প্রতিষ্ঠা রয়েছে শিবলিঙ্গ। মন্দিরের সামনে রয়েছে হাড়িকাঠ। এখনো মায়ের মন্দিরের পিছনে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী সেই নিমগাছটি। এছাড়াও রয়েছে বেশকিছু সমাধিস্থল, মন্দির সংলগ্ন একটি আশ্রম এবং ডোবা।

এখানে মন্দিরের মধ্যে এই নিম্ববাসিনী মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এক কোণে। মায়ের মূর্তি মৃণ্ময়ী এবং চার ফুটের। মায়ের পরনে থাকে বেনারসি, নাকে টানা দেওয়া নথ, মায়ের চোখ আকর্ণ। এখানে মায়ের সাথে মহাদেব অর্থাৎ শিবকে দেখা যায় না। এর পিছনে যে কাহিনী রয়েছে তা থেকে জানা যায়, কাশিতে বাবা বিশ্বনাথকে রেখে তিনি একা এসেছিলেন বলে মহাদেব নেই। তবে মহাদেব না থাকলেও পাশে রয়েছে একটি শিবলিঙ্গ।