তিল তিল করে গড়ে তোলা হাসপাতাল করোনা চিকিৎসায় দিতে চান ‘অ্যাম্বুল্যান্স দাদা’

নিজস্ব প্রতিবেদন : করোনা মোকাবিলার এই লড়াইয়ে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার পাওয়া যাচ্ছে না! কারণ জনবসতিপূর্ণ এলাকাতে এই সেন্টার তৈরি করতে সরকার যেমন চাইছেন না তেমন মানুষজনও বাধা দিচ্ছেন হাসপাতাল তৈরির কাজে। পশ্চিমবঙ্গ এমনিতেই ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা‌। তার‌পর সংক্রামিতের সংখ্যাও দিন দিন বেড়েই চলেছে। অথচ হাসপাতাল তৈরির জায়গা সীমিত। এমন সময় এগিয়ে এলেন করিমুল হক, যাকে আমরা ‘অ্যাম্বুল্যান্স দাদা’ বলেই জানি।

তিল তিল করে গড়ে তোলা তাঁর বাড়ির হাসপাতালটি তিনি রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দিতে চান কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরির জন্য। পদ্মশ্রী প্রাপক এই মানুষটি বুধবার জেলাশাসকের দফতরে এসে জানিয়ে যান সেই কথা। ক্রান্তির ধওলাবাড়ির দুর্গম এলাকা থেকে তিনি তার অসুস্থ মাকে হাসপাতালে নিয়ে দিতে পারেননি। কোনো চিকিৎসা না পেয়েই চোখের সামনে মারা যান তার মা। মায়ের মৃতদেহের সামনে তিনি সেদিন শপথ নিয়েছিলেন গ্রামের কাউকে তিনি বিনা চিকিৎসাতে মারা যেতে দেবেন না। নিজে একটি মোটরবাইক কিনে তিনি সেটিকেই অ্যাম্বুল্যান্সের রূপ দেন এরপর। হ্যাঁ, মোটর বাইকে করেই তিনি অসুস্থ মানুষদের পৌঁছে দিতেন হাসপাতালে।

দিনরাত, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষার কোনো তোয়াক্কা করেন না এই মানুষটি। এরপর গোটা এলাকাতে তাঁর নাম হয়ে যায় ‘অ্যাম্বুল্যান্স দাদা’। ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু করেন জনকল্যাণ মূলক এই কাজ, তারপর সময়ের সাথে কাজের পরিধিও বেড়ে গেছে। এই কাজের জন্যই পেয়েছেন পদ্মশ্রী পুরস্কার।‌ অ্যাম্বুল্যান্স দাদার এই গল্প নিয়ে বলিউডে ছবিও তৈরি হচ্ছে।

লকডাউনের মধ্যে বুধবারও তিনি জলপাইগুড়িতে একজন রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তারপর রোগীকে ডাক্তারের চেম্বারে বসিয়ে ওষুধের দোকানে যান তিনি। তার এলাকার অন্যান্য রোগীদের প্রেসক্রিপশনও তিনি নিয়ে এসেছিলেন সাথে করে তাদের ওষুধও কিনে নেন। এরপরই ছোটেন জেলাশাসকের সাথে দেখা করতে। জেলাশাসক অভিষেক কুমার তেওয়ারি তখন জরুরি বৈঠক করতে শহরের বাইরে গিয়েছিলেন তাই করিমুলকে অপেক্ষা করতে হয়। জেলাশাসকের সাথে টেলিফোনে কথা হয়েছে তাঁর।

মাল মহকুমার ক্রান্তির ধলাবাড়ি গ্রামে করিমুলের একটি অর্ধ নির্মিত হাসপাতাল বাড়ি আছে। এই হাসপাতালে অন্তত ১৪ টি বেড তৈরি করা যেতে পারে। করিমুল বাবু এনিয়ে বলেন, “পুরো দেশ করোনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমার বাড়িতে যে হাসপাতালটি আছে তার কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবু সরকার চাইলেই এই বাড়িটিকে কাজে লাগাতে পারেন।”