সাড়ে ৬ ফুটের বাক্সতেই চা বিক্রি করে দিন কাটছে আসানসোলের চা কাকুর

SHARMISTHA CHATTERJEE

Published on:

Advertisements

শর্মিষ্ঠা চ্যাটার্জী : জীবনের কি চরম পরিহাস! সত্যিই অবাক হতে হয়। কেউ থাকে রাজপ্রাসাদে কেউ বা আবার এক বাক্সের মধ্যেই জীবনের অর্ধেকটা পার! এমনই জীবনের এক মর্মান্তিক চিত্র উঠে এলো আসানসোলে। যাঁর জীবনের সাথে এমন চরম পরিণতি ঘটেছে তিনি হলেন আসানসোলের ষাটোর্ধ্ব এক চা ব্যবসায়ী গৌরীশঙ্কর জয়সওয়াল। এক বাক্সের মধ্যে কাটিয়ে দিলেন জীবনের দু’দশক। বাক্সের মধ্যেই পেতে ফেলেছেন সংসার।

Advertisements

কি বিস্ময়কর জীবনযাপন! ৩ ফুট বাই ৬ ফুটের এক কাঠের বাক্স আর তাতেই তাঁর সবকিছু চলে। দোকানদারি, কেনা বেচা, থাকা, খাওয়া দাওয়া এমনকি সবথেকে অবাক করা বিষয় শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষাতে ওই একমাত্র ভরসা বাক্সটি। জীবনের একমাত্র সম্বলকে ভরসা করে জীবনের ২২ বছর এভাবেই কাটিয়ে দিলেন তিনি।

Advertisements

বিহারের ভাগলপুরে তাঁর দেশের বাড়ি। প্রায় চল্লিশ বছর হয়ে গিয়েছে সেই দেশ বাড়ি ছেড়ে আসানসোলে আসা তাঁর। প্রথমে এসে শ্রমিকের কাজ করতে শুরু করলেও তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। তারপর যতবার চায়ের দোকান বসিয়েছেন বারবার ইস্কো কর্তৃপক্ষ পুরনিগম সেই দোকান ভেঙে ফেলেছে। তারপর তাঁর এই চিন্তা। বার্ণপুর বাসস্ট্যান্ডে ওই বাক্সতেই কেটে যায় তার সকাল থেকে রাত। সকাল হলেই প্রাতঃভ্রমণকারীরা ভিড় জমায় ধোঁয়া ওঠা চায়ের স্বাদ গ্রহণ করতে। সারাদিন চলে বিক্রিবাটা। আবার দিন ফুরিয়ে রাত গড়ালেই ওই বাক্সই তাঁর রাত্রিবাসের ঠিকানা।

Advertisements

ভোরবেলাতে চা বিক্রি করতে করতে দুপুর গড়িয়ে যায় তারপর নিজের জন্য খাওয়ার বানিয়ে নেন তিনি। তারপর খাওয়া দাওয়া সেরে আবার খোলেন দোকান। রাত পর্যন্ত দোকান করে, হিসেব নিকেশ সেরে ওই বাক্সই গৌরীর রাতের ঠিকানা হয়।

জীবনের প্রায় অর্ধেক অংশ এভাবেই কাটিয়ে দিলেন তিনি। তবে তা নিয়ে নেই কোনো আক্ষেপ উলটে বেশ খুশিই রয়েছেন নিজের জীবন নিয়ে। তবে প্রশ্ন ওঠে একটাই, কেন্দ্র সরকার বা রাজ্য সরকারের তরফে এত প্রকল্প থাকলেও গৌরী বাবু পাননি কোনো প্রকল্পই। কোনো রাজনীতিবিদই খোঁজ পাননি তাঁর। আড়ালেই থেকে গেছেন তিনি।

Advertisements