নিজস্ব প্রতিবেদন : কোথাও বেড়াতে গেলে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে ছবি তোলাটা অনেকেরই শখ। নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখলে মানুষ অবাক হয়ে যায় তখন যে মানুষ কখনো ক্যামেরায় হাত দেন নি তিনি ভাবেন মুহূর্তটিকে ক্যামেরাবন্দি করি। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম যেভাবে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করে সেটা হয়তো প্রয়োজনের থেকে একটু বেশি মাত্রায় হয়ে গেছে।
বাড়িতে কী পদ রান্না হচ্ছে থেকে শুরু করে, কে কোথায় কী করল সমস্ত কিছুই মুহূর্তের মধ্যে সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করাটা যেন একটা বদভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। ব্যক্তিগত মুহূর্তের মধ্যেও তাই চলে আসছে সেলফি, যে মুহূর্ত শুধু নিজেরই উপভোগ করার তাও সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোডের হিড়িক পড়েছে। আসলে ‘মানুষকে দেখানো’ এই বাহ্যিক দেখানোটাই সেলফির মূল কেন্দ্র। তাই বড় দোকানের ড্রেসিং রুমে গিয়েও সেলফি আবার রেস্টুরেন্টে টয়লেটের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি! শুনতে অবাক লাগলেও সেলফি যুগের একটি হুজুগে পরিণত হয়েছে এভাবেই। আর এই হুজুগে মেতে কতবড় ক্ষতি হতে পারে সাম্প্রতিক এই ঘটনাটি তার প্রমান সাম্প্রতিক এই ঘটনাটিই তার সবথেকে বড় প্রমাণ।
সম্প্রতি একজন ব্যক্তি প্যারাগ্লাইডিংয়ের সময় সেলফি তুলতে গিয়েছিলেন। তারপর যা হলো তাতে তিনি নিজেই পস্তাতে শুরু করলেন। সেলফি তুলতে গিয়ে লাখ টাকার ফোন হাত ফসকে পড়ে গেলো পাঁচ হাজার ফুট নীচের জলে!
এক মার্কিন মহিলা আল্পস পর্বতের উপর প্যারাগ্লাইডিং করতে গিয়েছিলেন। তার সাথে ছিল ‘আইফোন ১১ প্রো’, ভারতীয় বাজারে যার মূল্য ১ লাখ টাকার কাছাকাছি। সবই ঠিকঠাক চলছিল! কিন্তু অ্যাডভেঞ্চারের মুহূর্তটিকে ক্যামেরাবন্দি করবার জন্য একটি সেলফি স্টিকের সাহায্যে সেলফি তুলতে গিয়েছিলেন। আরেকটি ক্যামেরা ছিল প্যারাসুটের সাথে আটকানো। ভিডিও করতে গিয়ে তিনি একসময় হাত বদল করেন, আর ব্যস হাত বদল করতে গিয়েই এক লাখের ফোন পড়ে গেলো জলে! ভিডিওটি দেখে বেশিরভাগ মানুষেরই একটি কমেন্ট ছিল-‘ইশ! এত দামি ফোন!’
সত্যি আফসোস হওয়ার কথা কিন্তু অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটির ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন নিয়ে ভিডিও করলে তার দায়িত্ব যে নিজেকেই নিতে হয় তা তিনি জানতেন, আর সবটা জেনেই তিনি এই কাজ করেছিলেন! মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করতে গিয়ে! ফলস্বরূপ লাখ টাকা পড়ে গেল জলে!
মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করা একটা শখ হলেও পরিস্থিতিটাও বোঝা উচিত, কিছু কিছু মুহূর্ত নিজের উপভোগ করবার জন্য, কেবল নিজের জন্য, বিপদজনক মুহুর্তের সময় ভিডিও রেকর্ডিং করতে গেলে নিজের প্রাণের ঝুঁকি থাকে অনেক ক্ষেত্রেই। তাই এই সকল ক্ষেত্রে ভিডিও রেকর্ডিংগুলো এড়িয়ে চলাই উচিত। তাতে অ্যাডভেঞ্চারটা হয়তো সকলের সামনে তুলে ধরা যায় না, অ্যাডভেঞ্চার শেষে মনের মধ্যে অনুভবের একটা আনন্দ থাকে, দামি কিছু হারানোর বেদনা নয়।