চাওয়ালার মেয়ে থেকে বায়ুসেনার পাইলট, স্বপ্নের উড়ান সফল করে দেখালো আঁচল

নিজস্ব প্রতিবেদন : ২০১৩ সালের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্ৰস্ত হয় কেদারনাথ মন্দির সহ উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেই বিপর্যয় মোকাবিলায় ভারতীয় বায়ুসেনা দুর্গতদের উদ্ধার কাজে অসাধারণ সাফল্যের পরিচয় দেয়। টিভিতে তা দেখে ভীষণভাবে উৎসাহিত হন ২৪ বছরের কিশোরী আঁচল গঙ্গওয়াল। স্বপ্ন দেখা শুরু করেন ভারতীয় বায়ুসেনার ফাইটার পাইলট হওয়ার। কিন্তু সে স্বপ্নের পথে পাড়ি দেওয়া সহজ ছিল না কিশোরী আঁচলের।

বাবা ছিলেন ভূপালের নীমচ শহরের সামান্য চাওয়ালা। পড়াশোনার খরচ যোগানাই যেখানে কষ্টকর ছিল, সেখানে বায়ুসেনার ফাইটার পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখাই ছিল অসম্ভব ব্যাপার। তাই প্রথমে বাবা মা’র আপত্তি ছিল ফাইটার পাইলট হওয়ার এত বড় স্বপ্ন দেখায়। আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশিরাও তির্যক মন্তব্য ছুঁড়ে দিত একজন সামান্য চাওয়ালার মেয়ে ফাইটার পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখার জন্য। কিন্তু হাল ছাড়েননি আঁচল গঙ্গোয়াল। পরে বাবা মাও এগিয়ে আসেন মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে। মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে লাজলজ্জা ভুলে হাত পাতেন আত্মীয় স্বজনের কাছে। স্কুল কলেজের বেতন নির্ধারিত সময়ে জমা দিতে না পারায় কখনো কখনো মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছে তাদের।

বাবা সুরেশ গঙ্গোওয়াল জানান, “টাকার জন্য দশম শ্রেণীতে আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে চা বিক্রির কাজ করে চলেছি। বহু ধার দেনা করে মেয়েকে বড় করে তুলেছি, কিন্তু টাকার জন্য মেয়ের স্বপ্ন পূরণে কোন বাধা হতে দেননি।”

আঁচল একসময় স্কুল কলেজের গন্ডি পার হলেও পারছিলেন না ফাইটার পাইলট হওয়ার প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করতে। পড়াশোনা বাড়িয়ে দেন এরপর। শেষ পর্যন্ত ষষ্ঠ বারের চেষ্টায় তিনি সফল হন। ভারতীয় বায়ুসেনার ফাইটার পাইলট হওয়ার পরীক্ষায় প্রতি ধাপে উত্তীর্ণ হন আঁচল। প্রশিক্ষণ পর্বেও তিনি কৃতিত্বের সাক্ষ রাখেন। অবশেষে যোগ দেন ভারতীয় বায়ুসেনায় ফাইটার পাইলট হিসাবে।

আর এই সাফল্যের পর শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চোহান। বাবা সুরেশ গঙ্গোয়াল জানিয়েছেন, মেয়ের এত বড় সাফল্যে সব গ্লানি মুছে গেছে। ভোপালের ৪০০ কিমি দূরে নীমচ শহরে এতদিন সুরেশ গঙ্গোয়ালের পরিচয় ছিল চাওয়ালা। লকডাউনের কারণে পৌঁছাতে পারেননি মেয়ের কাছে। তবে দূর থেকে পাঠিয়েছেন আশীর্বাদ। এখন তাঁর পরিচয় সামান্য চাওয়ালা নয়, ভারতীয় বায়ুসেনার ফাইটার পাইলট আঁচল গঙ্গোয়ালের গর্বিত বাবা।