লাল্টু : ‘জল কালি’, নামেই রহস্য। কারণ এই কালি মা ১১ দিন বাদে বছরের অন্যান্য দিন গুলি জলের নিচেই অবস্থান করেন। পুজোর আগে ভক্তরা জল থেকে বিশেষ বিশেষ প্রথা অবলম্বন করে তুলে নিয়ে আসেন এবং ১১ দিন ধরে পূজা-অর্চনার পর আবার সারাবছর জলের নিচে অবস্থানের জন্য মাকে পাঠিয়ে দেন। এমন কালী পূজার রীতি রয়েছে বীরভূমের দুবরাজপুর থানার অন্তর্গত পাওয়ার হাউসের কাছে। মা কালীর পূজো এবং অবস্থানের বিশেষত্বে তিনি প্রচলিত নাম পেয়েছেন ‘জল কালি’।
পুজোকে উপলক্ষ করে এই ১১ দিন ব্যাপক ধুমধাম লক্ষ্য করা যায় মন্দির চত্বরে। সমাগম ঘটে হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতির। পুজোকে কেন্দ্র করে আয়োজিত ছোট মেলায় সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে অংশগ্রহণ পড়তে লক্ষ্য করা যায়। ১১ দিন ধরে চলা এই পুজোয় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তদের সমাগম চোখে পড়ার মতো। যদিও শেষের একদিন মন্দির চত্বরে ঢুকে মায়ের দর্শন করা সাধারণ ভক্তদের বারণ। কিন্তু তার আগে বাকি দিনগুলি যে কেউ এসে দর্শন করতে পারেন।
স্থানীয় একটি কালী পুকুর নামে পুকুরে সারা বছর মায়ের অবস্থান করার পর চৈত্র মাসের ২১ তারিখে মহা ধুমধামে মাকে পুকুর তোলা হয়। পুকুর থেকে তোলার ক্ষেত্রেও বিশেষ রীতি অবলম্বন করা হয় ভক্তদের মধ্যে। সেই দিন ভক্তরা উপোস করে জলে নামেন মাকে খোঁজার জন্য, তন্ন তন্ন করে চলে খোঁজাখুঁজি। তারপর খোঁজ মিললেই মাকে তোলা হয় পুকুরের পাড়ে। পুকুরের জল থেকে মায়ের মূর্তি তোলার সময় চলে হোম যজ্ঞ। এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখযোগ্য মায়ের মূর্তি শিলামূর্তি। তারপর পুকুরের পাড়েই মাকে দুধ এবং চিনি দিয়ে স্নান করানো হয়। স্নানের কাজ সম্পন্ন হলে বিশেষ গাছের শিকড় দিয়ে দোলা করে নিয়ে আসা হয় মূল মন্দিরে। শুরু হয় ১১ দিনের টানা পুজো।
চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত মূল মন্দির চত্বরেই চলতে থাকে পূজা-অর্চনা। আশেপাশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন মন্দির চত্বরে। স্বর্ণালংকার দিয়ে সুসজ্জিত মায়ের দর্শন পেতে ভক্তদের মধ্যে আবেগ এবং উৎসাহ চোখে পড়ার মত। চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত পুজো হওয়ার পর আবার পহেলা বৈশাখ মাকে নির্দিষ্ট ওই কালী পুকুরে বিসর্জন দিয়ে আসা হয় সারাবছর অবস্থানের জন্য।
দুবরাজপুর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান পীযুষ পান্ডে জানান, “দুবরাজপুরের ৮ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত এই কালি পুজোয় দুবরাজপুর ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্নপ্রান্ত থেকে অজস্র ভক্তের সমাগম ঘটে। হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতিকে কেন্দ্র করে চলে এই মেলা। জীর্ণ মন্দির বর্তমানে সংস্কার হয়েছে।”
প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান মির্জা শওকত আলী বলেন, “কয়েকশ বছরের পুরাতন এই পূজোর বিশেষ ঐতিহ্য রয়েছে। পাশে রয়েছে ফকির বাবার মাজার। যা সব সময় সম্প্রীতির বার্তা বহন করে আসছে।”
শতাব্দী প্রাচীন এই পূজো এবং মানুষের মধ্যে অসীম বিশ্বাসের বলে দিনের পর মন্দির চত্ত্বরে জনসমাগম বেড়েই চলেছে। শত শত বছর ধরে ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে চলে আসা এই পূজো বীরভূমের আলাদা ঐতিহ্য।