নিজস্ব প্রতিবেদন : পৃথিবীর দীর্ঘতম সুরঙ্গপথ অটল টানেল ৩রা অক্টোবর উদ্ধোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৩ সালে এই টানেল যা রোহতাং টানেল নামে পরিচিত ছিল তা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীমন্ডল সিদ্ধান্ত নেয় এর নাম ‘অটল টানেল’ নাম রাখার। ২০১০ সালের ২৮ জুন UPA চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধীর হাত ধরে এর কাজ শূরু হয়। দীর্ঘ একদশক ধরে তৈরি হওয়া এই অটল টানেল দুর্গম লাদাখের সঙ্গে বাকি ভারতের দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটাবে।
রোহটাং টানেল প্রজেক্টটি গড়ে তোলার দায়িত্ব পায় AFCON, সাপুরজি পালনজি গ্ৰুপ ও STRABAG AG সংস্থা। হিমাচল প্রদেশের মানালি থেকে লাদাখের লেহ ৯.০২ কিলোমিটার সুড়ঙ্গপথে সারা বছর সহজে পৌঁছানো যাবে এখন। কমে যাবে ৪৬ কিলোমিটারের ঘুরপথ। শীতের সময় এই পথ ছয় মাস ধরে তীব্র তুষারপাতের কারণে এতদিন ধরে বন্ধ থাকতো। কঠিন হয়ে পড়তো সীমান্তবাহিনীর কাছে রসদ পৌঁছানে। ভৌগলিকভাবে দুই শত্রুর থাবার কাছে থাকা এই অঞ্চলে এখন ট্যানেল পথে দ্রুত পৌঁছানো যাবে।
অটল টানেল তৈরির ইতিহাস
স্বাধীনতার পরই লাদাখ নিয়ে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা তৈরি হলে দুর্গম লাদাখে সহজে পৌঁছানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়। মোরাভিয়ান মিশন ১৯৬০ সালে প্রথম লাহুল-স্পিতি অঞ্চলে
টানেল তৈরির প্রস্তাব দেয়। নেহেরু প্রাথমিকভাবে রোপওয়ে তৈরির কথা বলেন। ১৯৮৩ সালে প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয় মানালি থেকে লে সহজে পৌঁছাতে গেলে ও সিয়াচিন ও আকসাই চীনের সীমান্তে ভারতীয় নজরদারি বাড়াতে এই টানেল প্রয়োজন। ৩৯ বছর পর প্রধানমন্ত্রী অটল বিবাহরী এই টানেল তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।
হিমালয় পর্বতমালার রোটাং পাসের পির পঞ্জল উপত্যকার ভিতর দিয়ে বানানো হয়েছে এই সূড়ঙ্গপথ। হিমালয় পর্বতমালার রোটাং পাসের পির পঞ্জল উপত্যকার ভিতর দিয়ে বানানো হয়েছে এই সূড়ঙ্গপথ। টানেল যেখানে শুরু হয়েছে সুমদ্রপৃষ্ঠ থেকে তার উচ্চতা ১০,১৭১ ফিট। সুড়ঙ্গপথ শেষ হয়েছে গ্ৰাম্ফু গ্ৰামে। যেখানকার উচ্চতা ১৩,০৫১ কিলোমিটার।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই অটল টানেল
অটল টানেল যেখানে শেষ হয়েছে তার একদিকে লাহুল-স্পিতি অঞ্চল আর একদিকে লেহ। ১৯৬০ সাল থেকে এই লাহুল অঞ্চলে সহজে পৌঁছানোর চেষ্টা শুরু হয় ভারত সরকারের। যা এতদিনে কার্যকর হল। এই লাহুল-স্পিতি ও লাদাখের সীমান্ত পেরলেই শুরু হচ্ছে বিতর্কিত তিব্বতি সীমান্ত। এই এলাকাতেই আছে ভারতীর সেনাবাহিনীর কৌশলগত সেনা ছাউনি বা পোস্ট। তীব্র তুষারপাত ও তুষারধষের কারণে মূল ভূখন্ডের সঙ্গে এই অঞ্চলে যোগাযোগ থাকতনা যা এতদিনে সমাধান হবে।
অটল টানেল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
৩৭০ ধারা জম্মু কাশ্মীর থেকে উঠে যাওয়ার পর থেকে এই অঞ্চল ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক ভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সীমান্তের ওপারেই চীন সিল্ক রোড তৈরি করে পাকিস্তান হয়ে পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপে বাণিজ্য ও রাজনৈতিক শক্তি বিস্তারের পরিকল্পনা শুরু করেছে। আকসাই চীন, লাদাখ, গিলগিট প্রাচীন কালের স্লিক রুটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও রাজনৈতিক কেন্দ্রের প্রবেশদ্বার হতে চলেছে।
সিল্ক রুটকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ভৌগলিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে চীন ও পাকিস্তান তার মোকাবিলায় অটল টানেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চলেছে।