নিজস্ব প্রতিবেদন : ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ১০ মাস পর চার্জশিট গঠন করে সিবিআই। এই চার্জশিটে রয়েছে ৪৮ জন অভিযুক্তের নাম। আর এর পাশাপাশি রয়েছে লাখো অজ্ঞাতপরিচয় করসেবকের নাম। যদিও চার্জশিটে থাকা ৪৮ জন অভিযুক্তের মধ্যে ইতিমধ্যেই ১৬ জন আগেই প্রয়াত। আর ২৮ বছর পর এই মামলার রায় রয়েছে বুধবার, যে রায় ঘিরে ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে জল্পনা তুঙ্গে।
সিবিআইয়ের চার্জশিট গঠন করার পর এই মামলায় সঙ্ঘ পরিবারের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতার নাম জড়ায়। যাদের মধ্যে রয়েছেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর যোশী, উমা ভারতি, উত্তরপ্রদেশে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং, বিজেপি নেতা বিনয় কাটিয়ার, সাক্ষী মহারাজ, ভিএইচপি নেত্রী সাধ্বী ঋতম্ভরা এবং রাম জন্মভূমি ট্রাস্টের সভাপতি নৃত্য গোপাল দাস ও সম্পাদক চম্পত রাই। এই মামলা চলাকালীন যে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন বিশ্বহিন্দুপরিষদের নেতা অশোক সিঙ্ঘল, গিরিরাজ কিশোর, বিষ্ণুহরি ডালমিয়া এবং শিবসেনা সুপ্রিমো বাল ঠাকরে।
অযোধ্যার বিতর্কিত জমি নিয়ে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের রায় গিয়েছে রাম মন্দিরের পক্ষে। রাম মন্দিরের পক্ষে রায় যাওয়ার পর আদালতের রায়ে রাম মন্দির তৈরীর জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও হয়ে গেছে। আর এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলায় কোনো প্রভাব পড়ে কিনা তা নিয়েই জল্পনা।
২৮ বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর সাবেক ফৈজাবাদ জেলার পুলিশ দুটি এফআইআর রজু করে। ওই এফআইআর-এ লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর যোশী, উমা ভারতি সহ অন্যান্য নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করা হয়। মামলা শুরু হয় রায়বরেলির আদালতে। এরপর ১৯৯৩ সালের অক্টোবর মাসে দুটি মামলায় যৌথ চার্জশিট দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী গোয়েন্দা সংস্থা। যদিও এই মামলায় ২০০১ সালে লাল কৃষ্ণ আডবাণী সহ ১৪ জন নেতাকে তাদের উপর থাকা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয় নিম্ন আদালত।
এরপর আবার ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফ থেকে নতুন করে আরও একটি চার্জশিট দেওয়া হয়। এই চার্জশিটে রায়বেরেলির আদালতের নির্দেশে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ না থাকায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ছাড়াই লাল কৃষ্ণ আডবাণীর বিরুদ্ধে মামলা চলতে থাকে। নিম্ন আদালতের তরফ থেকে লালকৃষ্ণ আডবাণী সহ আরও বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয় সেই রায় ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট সম্মতি দেয়। তবে সিবিআইয়ের তরফ থেকে নতুন করে আবার আবেদন করা হয় ২০১১ সালে। আর এই আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের সুপ্রিম কোর্ট এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়কে খারিজ করে দেয়। নতুন করে আবার লালকৃষ্ণ আডবাণী সহ ১৪ জন নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ যুক্ত হয়। আর এরপরই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আডবাণী সহ নেতাদের বিরুদ্ধে এবং করসেবকদের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি শুরু হয়। আর এই শুনানি শেষ ছয় ২০২০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর।
আর এসবের পর আডবাণী সহ অন্যান্য নেতাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তারা অস্বীকার করলেও লিবেরহান কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে বাবরি মসজিদ ধ্বংস ছিল না স্বতঃস্ফূর্ত, না অপরিকল্পিত। এমনকি অযোধ্যার বিতর্কিত জমি নিয়ে গত বছর সুপ্রিম কোর্টের রায় দেওয়ার সময়েও এই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বিষয়টি পর্যবেক্ষণে ছিল। এই মামলায় এখনো পর্যন্ত নিম্ন আদালত প্রায় সাড়ে ৩০০ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। এর পাশাপাশি খতিয়ে দেখা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬০০ নথি। আর প্রায় তিন দশক পর বুধবার এই মামলার রায়। তবে এর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি কবে ঘটবে তা নিয়ে এখন প্রশ্ন সব মহলে।