নিজস্ব প্রতিবেদন : র্যাপার কিং বাদশার আধুনিক শয্যায় সেজে উঠেছিল সিউড়ির রতন কাহারের ‘বড়লোকের বিটি লো’। আর বাদশার এই ‘গেন্দা ফুল’ Rap গানটি ট্রেন্ডিং হতেই তোলপাড় হয়ে যাই বাংলা। বাদশার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে বাঙালি লোকসংস্কৃতিকে বিকৃত করার, অভিযোগ ওঠে গানের মূল স্রষ্টা রতন কাহারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার। আর যখন এই বিতর্ক তুমুল আকার নেই তখন ময়দানে নামেন স্বয়ং RAP সিঙ্গার বাদশা। তিনি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে জানান, “বহু জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে তিনি এই গানটি তার ভিডিওতে সংযোজন করেছেন। কিন্তু কোথাও রতন কাহারের নাম উল্লেখ ছিল না। যে কারণেই তিনি স্রষ্টার নাম দিতে পারেননি।”
তারপরই তিনি জানান, “সবকিছু জেনে আমি এই গানের মূল স্রষ্টা রতন কাহারের পাশে দাঁড়াতে চাই। রতন কাহারকে আর্থিক সাহায্য করতে চাই, তার সাথে দেখা করতে চাই, কথা বলতে চাই।” আর এবার এই সমস্ত প্রতিশ্রুতি একে একে রাখলেন বাদশা।
কথামতো বাদশা রতন কাহারের সাথে ভিডিও কলিংয়ের মাধ্যমে কথা বলেন। আর প্রতিশ্রুতি মত রতন কাহারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠালেন আর্থিক সাহায্য। বাদশা ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য পাঠিয়েছেন। আর স্বভাবতই এই আর্থিক সাহায্য পেয়ে খুশি সিউড়ির এই হতদরিদ্র লোকশিল্পী। তবে আর্থিক সাহায্য বড় কথা নয়, আর্থিক সাহায্যের সাথে সাথেই একপ্রকার স্বীকৃতি পেলেন লোকশিল্পী রতন কাহার। পাশাপাশি রতন কাহার বাদশাকে সিউড়ি আসার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। যদিও বাদশা আগেই জানিয়েছিলেন, লকডাউন মিটে গেলেই তিনি সিউড়ি এসে রতন কাহারের সাথে দেখা করবেন।
তবে এই আর্থিক সাহায্যের পরেও বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বীরভূমের আর এক শিল্পী অতনু বর্মন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “অবশেষে আজ ৬ এপ্রিল ২০২০ rapper বাদশার প্রতিনিধি আদিত্যর একাউন্ট থেকে রতন কাহারের একাউন্টে পাঁচ লক্ষ টাকা জমা হয়েছে। এই ঘটনার কয়েকটি অভিমুখ লক্ষ্যনীয়—-
১) rapper বাদশার বিরুদ্ধে বাঙালি নেটিজেনদের মূল অভিযোগ ছিল শাড়ি পরা বঙ্গললনার শরীরের প্রতি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গী ও অশালীন শব্দ প্রয়োগে গাওয়া গান(যদি সেটাকে গান বলা হয় অবশ্য)। সেই সূত্রেই বড়লোকের বিটির স্রষ্টাকে কেন স্বীকৃতি দেওয়া হবেনা এই অভিযোগও উঠে এসেছিল। বাদশা দ্বিতীয় অভিযোগটিকে প্রাধান্য দিয়ে চটজলদি লাইভে এসে জানিয়ে দিলেন যে, তিনি জানতেননা কারণ মূল রেকর্ডে রতন কাহারের নাম ছিলনা। তবুও তিনি ক্ষতিপূরণ বাবদ নগদ টাকা দিয়ে জিতে নিলেন বাজি। বাঙালি প্রথম অভিযোগটি ভুলে গেল এবং বাদশার কতো বড় মন তাই নিয়ে মেতে উঠল চর্চায়। বেওসাটা এখনও অবাঙালির কাছেই শিখতে হবে কাকা !
২) লোকসঙ্গীত সম্রাজ্ঞী ( উপাধিটি কার দেওয়া জানা নেই) স্বপ্না চক্রবর্তীর কিন্তু সুযোগ ছিল নিজের অর্জিত গৌরব অনাবিল রাখার। তিনি সে পথে না হেঁটে নীরব থাকাই শ্রেয় মনে করলেন। আগামীতে তাঁকে নীরব থেকেই দেখতে হবে তাঁরই শহরে বাদশার সাম্রাজ্য বিস্তার। বেওসাটা এখনও অবাঙালির কাছেই শিখতে হবে দিদি।
শেষ কথা) যাক আপাতত রতন কাহারের পেটের জ্বালা কিছুটা মিটবে তবে মনের জ্বালা মেটানোর লড়াইটা জারি রইলো। এই পর্বে যাঁদের প্রত্যক্ষ ভাবে পাশে পেয়েছিলাম ঘরবন্দি অবস্থাতেও সেই রাজু দাস বাউল, সলিল সরকার, কাকলি দাস, চন্দন সিনহা ও শান্তনু দাসকে অভিনন্দন জানাই। সেইসঙ্গে অগণন ফেসবুকতুতো বন্ধুরা যারা উৎসাহ দিয়েছেন নিরন্তর তাঁদের প্রণাম।”