নিজস্ব প্রতিবেদন : ৬৯ বসন্ত পার করার পর আর ৭০ হলো না। লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মত কিংবদন্তির পর বুধবার প্রয়াত হলেন সঙ্গীত জগতের আর এক কিংবদন্তি বাপ্পি লাহিড়ী। বুধবার সাতসকালেই এই খবর ছড়িয়ে পড়ে। জানা যায় মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি।
বাপ্পি লাহিড়ী মানেই ডিস্কো কিং আর ঝলমলে গয়না নয়। তার জীবন যেমন রঙিন ঠিক তেমনি রয়েছে সংগ্রামও। মাত্র তিন বছর বয়সে তবলা শিখেছিলেন এই কিংবদন্তি। ছোটো থেকেই ইচ্ছে ছিল মুম্বইয়ে পাড়ি দেওয়ার। সেই ইচ্ছে থেকেই তিনি নিজের স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন। তার জীবনের অজানা কাহিনী আজ তাঁর প্রয়াণে আঁকড়ে ধরেছে বাঙ্গালীদের।
বাপ্পি লাহিড়ীর আসল নাম হল অলোকেশ লাহিড়ী। ১৯৫২ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন জলপাইগুড়িতে। এক আত্মীয় তার ডাক নাম রেখেছিলেন বাপি। তবে এই বাপিই যে আগামী দিনে সঙ্গীতের দুনিয়ায় বিশ্বকাপ পাবে তা হয়তো তখন কেউ টের পান নি। বাপ্পি লাহিড়ীর পরিবারে ছোট থেকেই ছিল সঙ্গীতের চর্চা। বাবা অপরেশ লাহিড়ী এবং মা বাশুড়ি লাহিড়ী দুজনেই বাংলা সঙ্গীত জগতের অন্যতম পরিচিত মুখ। সুতরাং গানকে পাথেয় করে নিজের স্বপ্ন পূরণ করার ক্ষেত্রে খুব একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে বড় হতে হয়নি বাপ্পি লাহিড়ীকে।
মুম্বইয়ে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাপ্পি লাহিড়ী মাত্র ১৯ বছর বয়সে। সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং বলিউড সিনেমায় গান গাওয়ার সোনালী স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে শুরু করে ১৯৭৩ সাল থেকে। সেই সময় তিনি হিন্দি সিনেমা নানহা শিকারীতে প্রথম গান রচনা করেন। এর দু’বছর পর অর্থাৎ ১৯৭৫ সালে তাহির হুসেনের জখমী সিনেমায় কাজ করেন তিনি।
যদিও এর আগে ১৯৭২ সালে তিনি বাংলা ছবি দাদুতে সুর দিয়েছিলেন। তবে কলকাতায় মন না টেকার কারণে তিনি মুম্বইয়ে পাড়ি দিয়ে সেখানে আরেক বাঙালি শমু মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে তার ব্রেক হয়। শমু মুখোপাধ্যায় কাজলের বাবা এবং তনুজার স্বামী।
বাপ্পি লাহিড়ী ১৯৭৪ সালে রাহুল দেব বর্মন যখন খুব ব্যস্ত সেই সময় প্রযোজক হুসেনের ছবি মদহোসে গানের ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করার সুযোগ পান। কিন্তু সেই সময় বাঁধ সাধে তার বাবা। তার বাবা জানান এই ছবিতে কাজ করার জন্য নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট আনতে হবে রাহুল দেব বর্মনের থেকে। ভবিষ্যতে যেন এই নিয়ে কোনো কথা না হয়। পরে ১৯৭৫ সালে ব্রেক করেন বাপ্পি লাহিড়ী।
সেই সময় বাপ্পি লাহিড়ী হিট হিসাবে জখমিকেই ধরা হয়। কিশোর কুমারের হাস্কি গলায় জালতা হ্যায় জিয়া মেরে অথবা লতার গলায় বাপ্পির সুরে আভি আভি থি দুশমানি আজও ভোলার নয়। এরপর রোমান্টিক গান থেকে শুরু করে ভজন, কাওয়ালি থেকে রাগাশ্রয়ী গান, সবকিছুতেই তার দক্ষতা ধরা পড়ে।
এরপর ১৯৮৬ সালে তিনি গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ডে নিজের নাম উঠান ৩৩টি ছবির জন্য ১৮০টি গান রেকর্ড করে। তিনি একমাত্র ভারতীয় মিউজিক ডিরেক্টর যিনি জোনাথন রসের লাইভ পারফরম্যান্সে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন ১৯৮৯ সালে। এমনকি তাঁর আইকনিক গান জিমি জিমি আজা আজা… হলিউড ছবি ‘ You Don’t Mess With The Zohan’s’-এ ব্যবহার করা হয়েছিল।