লাল্টু : মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে বীরভূমের অজয় নদের তীরে হয় জয়দেব কেন্দুলি মেলা। একসময় প্রচুর পরিমাণ বাউলরা এই মেলায় এসে গান গাইতেন। যে কারণে এই মেলাকে বাউল মেলাও বলা হয়ে থাকে। এই জয়দেব মেলা শেষে চিরাচরিত প্রথা মেনে পরবর্তী তিন দিনের জন্য দুবরাজপুরের পাহাড়েশ্বরের পাশে থাকা দরবেশ পাড়াতে বাউল, ফকির, সাধু ও বৈষ্ণব এসে জমায়েত হয়। রীতি মেনে বিগত ৫৫০ ধরে এই বাউল, ফকিরি ও লোকগীতির আসর অনুষ্ঠান হয়ে আসছে।
বীরভূমের দুবরাজপুরের পাহাড়েশ্বর বা মামাভাগ্নে পাহাড়ের পাশেই রয়েছে দরবেশ পাড়া। এই দরবেশ পাড়াতেই রয়েছে সাধক পুরুষ অটল বিহারী দরবেশের সমাধি। রীতি মেনে অর্থাৎ সাধক পুরুষ অটল বিহারী দরবেশের সমাধিস্থলে প্রতিবছর মাঘ মাসের ৩ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত এই তিনদিন বসে বাউল গানের আসর। আর এই বাউল গানের আসরে অংশগ্রহণ করেন অজস্র বাউল শিল্পীরা। এই বাউল শিল্পীদের অংশগ্রহণে এই শহরে বাউলের আসরের সাথে জয়দেব মেলার রয়েছে সাদৃশ্য।
জয়দেব মেলা থেকে এই দরবেশ বাবার আখড়ায় আসার জন্য সাধুসন্ত, আউল, বাউল, সাঁই, দরবেশদের নিমন্ত্রণ জানানো হয় জয়দেব মেলা প্রাঙ্গণের আখড়ায় আখড়ায়। আর সেই নিমন্ত্রণ পেয়েই সাধুসন্ত, আউল, বাউল, সাঁই, দরবেশরা বীরভূমের পাহাড়েশ্বরের পাশে থাকা দরবেশে চলে আসেন। জয়দেব মেলা সমাপ্তির পর জয়দেব মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বাউল গানকে সঙ্গী করে এই সমস্ত মানুষেরা জমায়েত করেন দরবেশ বাবার আগড়ায়।
দরবেশ বাবার আগড়ায় এই বাউল আসরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই আসরে শুধু বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তের বাউল শিল্পীরাই আসেন তাই নয়, এমন কি ভিন রাজ্য ঝাড়খণ্ড, বোকারো, ভিন জেলা বাঁকুড়া, মানভূম, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি নানান স্থান থেকে তারা আসেন। আর বাউল প্রেমিরাও ছুটে আসেন এখানে, তাদের ভিড়ও থাকে চোখে পড়ার মতো।
তবে এবারে মন ভাল নেই দুবরাজপুরের দরবেশ পাড়ায়। ওমিক্রনের প্রভাবে দিন দিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। চলছে সরকারি বিধিনিষেধও। এই বছর জয়দেব কেঁদুলি মেলাতে বা পুণ্যস্নান করতে খুব কম সংখ্যকই পুণ্যার্থীরা এসেছিলেন। সাধু, গুরু, বৈষ্ণবও কম এসেছিলেন। জয়দেবের ভিড় না থাকার কারণে দুবরাজপুরে সাধুসন্ত, আউল, বাউল, সাই ও দরবেশ খুবই কম সংখ্যায় এসেছে। এত কম সংখ্যায় এর আগে কখনো দেখেনি দুবরাজপুর শহরবাসী। আর এই কিছু সংখ্যায় শিল্পীদের নিয়ে চলছে বাউল গানের আসর। মূলত বাউলগান, ফকিরি গান, লোকগীতি ও আধ্যাত্মিক আলোচনায় শোনার জন্যই মানুষ এখানে ছুটে আসেন।