করোনা ছাড়াও আরও ৪টি মহামারীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন ভারতে

নিজস্ব প্রতিবেদন : সংক্রামক কোনো রোগ ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়লে তা মহামারীর রূপ নেয়। বর্তমানে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ কে বিশ্বব্যাপী মহামারি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে। বিগত সাত মাস ধরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছে গোটা বিশ্ব। বিজ্ঞানী, গবেষক, চিকিৎসক থেকে অসংখ্য সাধারণ মানুষ সকলেই এই রোগের প্রতিষেধকের অপেক্ষায়। ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসের দাপটে বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আর ভারতেও এখনো পর্যন্ত ১৬ হাজার ৮৯৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

তবে এমন সংক্রামক রোগ এই প্রথম নয়। এমন আরও বেশ কতকগুলি সংক্রামক রোগের ইতিহাস বহু পুরনো। প্রাচীন কাল থেকেই এই ধরনের সংক্রামক রোগের অস্তিত্ব দেখা গিয়েছে। মানুষ যখন কৃষিভিত্তিক ছিল, সেই সময় থেকেই বহু সংক্রামক রোগ মহামারিতে পরিণত হয়েছে। ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, ইনফ্লুয়েঞ্জা, গুটিবসন্ত প্রভৃতি বিভিন্ন রোগ নানা সময়ে মহামারির আকার নিয়েছে। আর মানবসভ্যতা যত উন্ননের দিকে এগোচ্ছে, মহামারির প্রকোপ ততই বেড়ে চলেছে। আর ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে ভারত এর আগেও করোনার মতো বহু মহামারী হানা দিয়েছে। তখনও বহু মানুষ তাদের প্রাণ হারিয়েছিলেন।

কলেরা : কলেরা ভারতে ১৮১৭ সাল থেকে ১৮৮১ সালের মধ্যে মোট পাঁচ বার সংক্রমণ ঘটিয়েছে। কলেরা রোগের প্রথম সূত্রপাত রাশিয়াতে। সেখানে এই রোগে প্রায় ১০ লাখ মানুষের প্রাণ হারিয়েছিলেন। দূষিত জলের মাধ্যমে এই রোগটি পরে ব্রিটিশ সেনাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিতেও এই রোগ মহামারীর আকার ধারণ করে। যা পরে ভারতে প্রবেশ করে এবং তাতেও প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারান।

স্পেন, আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাপান, ইতালি, জার্মানি ও আমেরিকাতেও এই কলেরা মহামারীর আকার ধারণ করেছিল। এসব অঞ্চলে প্রায় ১.৫ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে বিশ্বে মোট ২২ থেকে ২৩ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। এমনকি এখনও ভারতের বহু গ্রামে কলেরা দেখা যায়।

বম্বে প্লেগ : উনিশ শতকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে একটি হল প্লেগ অতিমারি বা যা ‘বম্বে প্লেগ’ নামে পরিচিত। এই অতিমারিরও উৎপত্তি চিন প্রদেশ। অনেকের মতে, সেখান থেকেই জাহাজের মাধ্যমে সংক্রামিত ইঁদুর বম্বে বন্দরে এসে পৌঁছায়। এই প্লেগ ভারতে ঢুকেছিল ১৮৯৬ সালে।

তখন থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে কেবল ভারতেই প্রাণ হারিয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। তৎকালীন বম্বে শহরে সংক্রমণের প্রথম বছরে মৃত্যু হার ছিল সপ্তাহে প্রায় ১,৯০০। পরে এই মহামারী কলকাতা, করাচি ও অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। এই মহামারীতে বিশ্বব্যাপী মোট ৩০ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।

স্প্যানিস ফ্লু (ইনফ্লুয়েজ্ঞা) : ১৯১৮ সাল থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত স্প্যানিস ফ্লু বা ইনফ্লুয়েজ্ঞায় প্রাণ হারান কোটি কোটি মানুষ। মনে করা হয়, এই রোগটিও চিন দেশ থেকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯১৮ সালের শুরুর দিকে এই ফ্লু উত্তর আমেরিকায় চিনা শ্রমিকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরে তা ইউরোপে ছড়ায়।

স্পেনের মাদ্রিদে প্রথম এই রোগটি মহামারি আকার ধারণ করায় এর নাম দেওয়া হয় ‘স্প্যানিশ ফ্লু’। পরে এই ফ্লু ইউরোপে থেকে ভারতে প্রবেশ করে। এই মহামারিতে বিশ্বব্যাপী প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। কেবলমাত্র স্পেনেই ৮০ লক্ষ মানুষ এই ফ্লুতে আক্রান্ত হন। গোটা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০ কোটি।

স্মল পক্স : স্মল পক্স বা গুটি বসন্ত রোগের ইতিহাস বহু পুরনো। ধারণা করা হয়, রোগটির প্রথম প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর মিশরীয় মমিগুলিতে। পরে তা মহামারী রূপ নেয় অষ্টাদশ শতাব্দীর ইউরোপে। পৃথিবীতে শেষবার স্মল পক্স বা গুটি বসন্ত রোগের মহামারি হয়েছিল ১৯৭৪ সালে ভারতে।

সেই সময় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই রোগে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশা। এই রোগের ভারতের ২০ হাজারেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছিলেন। উত্তর প্রদেশ ও বিহারে এক লাখ দশ হাজার মানুষ গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়েছিল।