বিধায়কদের ক্ষোভে একুশের ভোটের আগে বেসামাল তৃণমূল

নিজস্ব প্রতিবেদন : তৃণমূলের ভিতরে বাড়ছে বিধায়কদের বিক্ষোভ। একের পর এক দলীয় নেতার বিদ্রোহে একুশের ভোটের আগে বেসামাল তৃণমূল। শুভেন্দু অধিকারী, শীলভদ্র দত্ত, প্রবীর ঘোষাল, মিহির গোস্বামীর মতো বিভিন্ন জেলার সেনাপতিরা যেভাবে হাইকমান্ড মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছেন, তাতে দলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়ন্ত্রণ যে আলগা হচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই বলেই মনে করছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল।

দুই মেদিনীপুরের গড় সামলাচ্ছেন দীর্ঘদিনের রাজনীতিতে পোড়খাওয়া শিশির ও শুভেন্দু অধিকারীর পরিবার। দলের ভিতরে ক্ষমতার লড়াইয়ে দুই পক্ষ দিচ্ছে রাজনৈতিক চাল। শুভেন্দু অধিকারী যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে দিচ্ছেন কৌশলী বক্তব্যে তাঁর দয়ায় তিনি রাজনীতি করছেন না। বলছেন, “আমি প্যারাসুটে নামিনি এবং লিফলেটে উঠিনি। ছোটলোকদের দিয়ে বাজে কথা বলিয়ে, ভেবেছে আমি উত্তর দেব, কুকুর পায়ে কামড়ালে, মানুষ কখনো কুকুরের পায়ে কামড়ায় না।”

পাল্টা মমতার শিবির থেকে কখনো ফিরহাদ হাকিম, কখনো অখিল গিরি ছুঁড়ে দিচ্ছেন চ্যালেঞ্জ। যদিও শুভেন্দু পরিস্কার বলেছেন তাঁর ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিকল্পনার কথা, “আমরা চলি সম্মুখপানে কে আমাদের বাঁধবে, রইল যারা পিছুর টানে কাঁদবে তাঁরা কাঁদবে।”

বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত পিকের রাজনৈতিক কলাকৌশল নিয়ে তীব্র বিরোধীতা জানিয়েছেন। জানিয়েছেন দীর্ঘদিন রাজনীতি করার পর পিকের মতো বাণিজ্যিক সংস্থার কাছে রাজনীতির পাঠ শিখবেন না। প্রশ্ন তুলেছেন জাতপাতের রাজনীতি বাংলায় তৃণমূলের আমদানি করা নিয়েও।

দলে সমস্ত পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন মিহির গোস্বামী। যোগাযোগ করেছেন বিজেপির সঙ্গে। আবার দলের কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল।

প্রবীর ঘোষাল জানিয়েছেন, “দলকে শক্তিশালী করার কথা বলা হলেও গোষ্ঠী কোন্দলের রাস টানা হচ্ছে না। বিড়ালকে মাছ পাহারা দেওয়ার জন্য রাখা হচ্ছে। সেই বিড়ালই মাছ নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এতে শক্তিশালী হচ্ছে বিরোধীরা। শক্তি বাড়াতে গিয়ে শক্তি ক্ষয় করে ফেলছে নেতৃত্ব।”

গোষ্ঠী দ্বন্দ প্রবল আকার নেওয়ার ছবি ফুটে উঠেছে উত্তরবঙ্গেও। দেড়মাস আগে কোচবিহার জেলায় তৃণমূলের নতুন জেলা ও ব্লক কমিটির তালিকা প্রকাশের পরই কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জানান, বিধায়ক পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা। পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্য সরকারের দুই জন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও বিনয়কৃষ্ণ ঘোষ তাঁর সাথে দেখা করতে গেলে দেখা পাননি। কিন্তু বিজেপির সাংসদ‌ নিশীথ অধিকারীর সঙ্গে দেখা করেছেন মিহির গোস্বামী। যাতে বিদ্রোহের ছবি প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

মুকুল রায়ের বিদ্রোহ সামাল দিতে ব্যর্থ হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ফলে ব্যাপক ভাঙন ধরান মুকুল রায় তৃণমূলের ভিতরে। বাংলায় দ্বিতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে উত্থান ঘটে বিজেপির। অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁ, অনুপম হাজরার মতো তৃণমূলের বহু তরুণ তুর্কি বিজেপিতে যোগ দেন। এরপর এতে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসে। এবার জেলায় জেলায় তৃণমূলের একদা রাজনৈতিক সেনাপতিরা যেভাবে দল পরিচালনা নিয়ে বিক্ষোভে প্রকাশ করছে তাতে দলের ভিতরেই তৈরি হয়েছে দলের সঠিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালনার ব্যাপরে।

তৃণমূলের এই দলীয় বিক্ষোভ অশনীসঙ্কেতের মতো জানান দিচ্ছে দলের অন্দরে বিক্ষোভ, বিদ্রোহ সামাল দিতে না পারলে ২১ ভোটে কিন্তু ভরাডুবি ঘটার সম্ভাবনা তৃণমূলের, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।