লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির পিছনে কেন্দ্র সরকারের রয়েছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, দাবি বিশেষজ্ঞদের

নিজস্ব প্রতিবেদন : আমরা সকলেই জানি এই মুহূর্তে ভারতে করোনা সংক্রামিতদের সংখ্যা ১১,৫৯৬। মৃতের সংখ্যা ৩৯৮ (covid19india.org)। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগে বলেছিলেন যে লকডাউন চলবে ১৪ই এপ্রিল অবধি। কিন্তু এরপর তিনি লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে দিলেন। কেন লকডাউনের মেয়াদ বেড়ে গেলো? এই লকডাউন বাড়ার ফলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হলো মারাত্মকভাবে, তেমনি সাধারণ মানুষেরও দুর্ভোগ বাড়লো। সব জেনেও এই মেয়াদ বাড়ানো হলো কেন?

হ্যাঁ, বাড়ানো হলো তার কারণ নরেন্দ্র মোদী বলছেন সবার আগে মানুষের জীবন, তারপর অন্য কিছু। দেশের জণগণের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর পিছনে আছে সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনাও। কী সেই পরিকল্পনা যার জন্য মেয়াদ বেড়ে গেলো ৩রা মে অবধি?

আসলে এখন আমাদের ভারতবর্ষে ৩ লক্ষেরও বেশি মানুষ কোয়ারেন্টাইনে আছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের মতে সেই সংখ্যাটা হলো ৩,২৩,০০০। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ এখন আইসোলেশনে রয়েছেন। এখন এই মানুষগুলির মধ্যে কারা কোভিড-১৯ পজিটিভ তা তো এই মুহুর্তে আমরা জানতে পারছি না। এইমুহুর্তে জানার কোনো উপায়ও নেই। এই বিষয়টির দিকে নজর রাখতেই স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এমন সিদ্ধান্ত। আগামী সপ্তাহ অবধি এই কড়া পর্যবেক্ষণের পরই প্রধানমন্ত্রী ‌পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

আসলে যারা ‘রেড’ জোনে আছেন, যারা এখন আইসোলেশনে আছেন তাদের মধ্যে কতজন করোনা পজিটিভ কেস ধরা পড়বে এটি দেখার জন্যই অপেক্ষা করে আছেন প্রধান‌মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী, “যে সকল এলাকাগুলি হটস্পট হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে সেই সকল জায়গাগুলিকেই আমরা কঠোর পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখবো।” এই নজরদারির সময়সীমা হল আগামী ২০ই এপ্রিল অবধি। মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে মোদিজি এমনটাই বলেন।

আইসোলেশনে মহারাষ্ট্রের জায়গা সবার প্রথমে। এরপর উত্তরাখন্ড এরপর রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা। মহারাষ্ট্রে যথাক্রমে ৬৬,৩১১ জন, উত্তরাখণ্ডে ৫৬,১৬৬ জন, রাজস্থানে ৩৫,৮৪৩ জন, উত্তর প্রদেশে ৩১,১৫৮ জন, হরিয়ানায় ১৬,২২৪ জন আইসোলশনে রয়েছেন। ঝাড়খণ্ডে ১৫,৫৪৮ জন ও দিল্লিতে ১৫,৩২৭ জন আইসোশনে রয়েছেন। দিল্লিতে মৃতের সংখ্যা ২৮। পশ্চিমবঙ্গে ও সংক্রামিতদের সংখ্যা ১০০ পেরিয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৩২৯ জন। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে কেউ আছেন সরকারি হেফাজতে, কেউ স্বগৃহে নজরদারিতে আছেন। তবে এতগুলো রাজ্যের মধ্যে কেরল ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে সবথেকে ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। ৩৭৫ জন কেরলে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এছাড়া তারা ৮০০-র বেশি মানুষকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

একজন সিনিয়র সরকারি কর্তার কথা অনুযায়ী, “এই সকল পরিসংখ্যানগুলির উপরে নির্ভর করছে ভারতের ভবিষ্যতের লড়াই। কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে এই লড়াই কোনপথে এগোবে তা নির্ধারণ করা হবে এই হটস্পট এলাকাগুলোতে নজর রেখেই। এই কারণেই লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সবকটি রাজ্যই সহমত পোষণ করেছে। আশা করা যায় আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা আরো নতুন কিছু মানুষকে চিহ্নিত করতে পারবো তার সাথে হটস্পট এলাকাগুলিও। লকডাউনের পরই সংক্রামিত এলাকাগুলি চিহ্নিত করা সম্ভবপর হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কতকগুলো হটস্পট এলাকা চিহ্নিত করা যাবে।”