গল্প হলেও সত্যি, এক সময়ের অধ্যাপক এখন অটো চালক

SHARMISTHA CHATTERJEE

Updated on:

Advertisements

শর্মিষ্ঠা চ্যাটার্জী : নিয়তির চরম পরিহাস যে কাকে কথায় দাঁড় করায় তা বোধহয় কেবল সৃষ্টিকর্তাই জানেন। তিনি চাইলে কাউকে ভিখিরি থেকে কোটিপতি বানিয়ে দেন আবার কাউকে কোটিপতি থেকে একেবারে ফকির। সৃষ্টিকর্তার কারিশমা বোঝা বড়ো দায়! প্রবল দারিদ্র্য অবস্থা থেকে ভাগ্যের চক্রের ফেরে এক নিমেষে কোটিপতি হওয়ার গল্প তো আমরা অনেক জেনেছি, আজকের গল্পটা একেবারে ব্যতিক্রমী। যাঁকে ঘিরে গল্প তাঁকে ভাগ্য কোটিপতি করেনি বরং এক নিষ্ঠুর বাস্তবের মুখোমুখি করেছে।

Advertisements

যে সত্য কাহিনীর কথা নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন সেই গল্প উঠে এসেছে বেঙ্গালুরুর এক বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত কর্মী নিকিতা আইয়ারের মাধ্যমে। যিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ব্যক্তির জীবনের কাহিনী সকলের সামনে এনেছেন। যাঁর জীবন কাহিনী নিয়ে এত গল্প হচ্ছে তিনি হলেন বেঙ্গালুরুর এক অটো চালক, নাম পাত্তাভি রমন। আমাদের সারাদিনের কর্মজীবনে কতজনের সাথে না দেখা হয়ে যায় তেমনই সেদিন নিকিতা অফিস যাওয়ার জন্য প্রতিদিনের মতো অটোর অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।

Advertisements

তারপরেই গল্পের আসল সূচনা। অটো নিয়ে এক বৃদ্ধ অটো চালক সামনে এসে দাঁড়িয়ে একেবারে বিশুদ্ধ ইংরেজিতে নিকিতাকে জিজ্ঞেস করে বসেন, ‘কোথায় যাবেন?’ নিকিতা তার প্রশ্নের উত্তর দিলেও প্রথমটা বেশ হতচকিত হয়ে যান। একজন অটো চালক তিনি এত ভালো ইংরেজি বলছেন কিভাবে এই প্রশ্ন মনে এসে যায় নিকিতার।

Advertisements

অটোর ৪৫ মিনিটের সফরে অটো চালকের সাথে কথোপকথন নিকিতাকে তার সমস্ত কৌতূহলের উত্তর দেয়। ৭৪ বছর বয়সী পাত্তাভি রমন একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাঁকে আজ এই পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছে। তিনি মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি নামি কলেজের ইংরেজি বিষয়ের অধ্যাপক ছিলেন। দীর্ঘ কুড়ি বছর অধ্যাপনার পর তিনি অবসর নিলেও ৬০ বছর বয়সেও তাঁর আর্থিক পরিস্থিতি খুব একটা ভালো ছিলনা।

দীর্ঘ বছরের অধ্যাপনার পরেও আর্থিক পরিস্থিতি ভালো না থাকার পেছনে কারণটি অবশ্য নিজেই বুঝিয়ে বলেছেন এমএ, বি এড ওই বৃদ্ধ। বেসিরকারি কলেজ হওয়ার দরুন মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মাসে বেতন স্বরূপ পেতেন যে কারণে পেনশনের কোনো ব্যাপারই থাকেনি।

বর্তমান তাঁর মাসে আয় হয় খুব জোর ১০০০ টাকা, নিজে মুখে স্বীকার করে তিনি বলেছেন, ‘যা দিয়ে কোনরকমে আমার আর আমার বান্ধবীর চলে যায়।’ বান্ধবী নাম টা শুনে নিজের কৌতূহলের বশেই নিকিতা জিজ্ঞাসা করে বসে, তখন তিনি জানিয়েছেন নিজের স্ত্রী কেই তিনি বান্ধবী বলে ডাকেন।

বৃদ্ধের সাথে কথা বলতে বলতে আরও জানতে পারেন নিকিতা অবসর গ্রহণের পর বহু চেষ্টা করেও কোনো চাকরি না জোটাতে পেরে শেষে এই অটো চালানোর পেশাকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। আর তাতেই দুজনের কোনরকমে দিন কেটে যায়।

কি অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন তাইনা? আমাদের চারপাশে মানুষের জীবনের অতলে কত অজানা গল্পই না লুকিয়ে থাকে আমাদের জানা হয়না। তাইতো নিকিতা, এমন একটি অনুপ্রেরণার গল্প সবার সামনে তুলে ধরেছেন। এই গল্প শুনে যদিও অল্পবিস্তর চোখে জল এসে উপক্রম হলেও বেশ মনের জোর দেয় এই রুপকথার মতো কাহিনী গুলি।

Advertisements