Bengali Idiom: ছোটবেলায় আমরা প্রায়ই শুনেছি, “ভাঁড়ে মা ভবানী”! পকেট ফাঁকা, বা কোষাগার শূন্য হয়ে গেলে এই বাগধারা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই প্রবাদটির (Bengali Idiom) পেছনের গল্প জানেন? মা ভবানীর মতো দেবী, যিনি জগৎ পরিচালনার প্রতীক, তাঁর ভাঁড় শূন্য হয় কী করে? এটি শুধু একটি সাধারণ কথা নয়, এর পেছনে লুকিয়ে আছে বাংলার ঐতিহ্য এবং রহস্যময় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত এক গভীর ইতিহাস।
প্রবাদটির (Bengali Idiom) মানে কি জানা দরকার। প্রথমেই আসা যাক, ‘ভাঁড়’ শব্দটির দিকে। এটি মাটির তৈরি পাত্র, যেখানে একসময় গ্রাম বাংলার মানুষ শস্য, বিশেষ করে চাল মজুত করতেন। ধান মাড়াই শেষে সেই চাল মাটির বড় বড় ভাঁড়ে সংরক্ষণ করা হত, যা পরিবারকে সারা বছর খাদ্য যোগাতো। কিন্তু চাল কমে এলে? তখন দেখা দিতেন মা ভবানী। কেন? কারণ চালের মজুত কমে গেলে মাটির ভাঁড়ের নিচে রাখা দেবীর মূর্তি ধরা পড়তো, যা সংকেত দিত, চাল শেষ হয়ে এসেছে।
মা ভবানী এখানে শুধু দেবী নন, তিনি ত্যাগের প্রতীক। সেই ত্যাগের মাঝেই তিনি জীবনের শূন্যতার দিকটি তুলে ধরেন। তাঁর উপাসকরা জীবনে ধনসম্পদের আশা ত্যাগ করেন, তাই বলা হয় ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’। এই বাগধারাটি কেবল গ্রামীণ জীবনের খাদ্য সংকট বোঝাতে নয়, বরং বৃহত্তর আর্থিক সংকট বোঝাতেও ব্যবহার করা হয়। আজকের দিনে অর্থনৈতিক দুরবস্থা, সরকারের ফাঁকা কোষাগার, বা ব্যক্তির শূন্য পকেট বোঝাতে আমরা এই শব্দবন্ধ প্রয়োগ করি।
আরো পড়ুন: না জানলে জেনে নিন AM এবং PM এর ফুল ফর্ম, আজকের প্রতিবেদনে পাবেন বিস্তারিতভাবে
তবে মা ভবানী শুধুমাত্র রিক্ততার প্রতীক নন, তিনি পূর্ণতারও প্রতীক। বাংলার ঘরে ঘরে তিনি মা লক্ষ্মীর রূপে পূজিতা হন, যিনি ঐশ্বর্যের অধিষ্ঠাত্রী। তাই ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ বাগধারাটি দুই বিপরীত মেরুকে একসঙ্গে ধরে রেখেছে—একদিকে রিক্ততা, অন্যদিকে পূর্ণতা। আর এই রহস্যময় দ্বৈততা এই প্রবাদটিকে করেছে আরও গভীর ও চমকপ্রদ।
যদিও আজকের দিনে এটি (Bengali Idiom) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শূন্যতার প্রতীক হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে, কিন্তু এর মধ্যে লুকিয়ে আছে বাংলার গোপন ঐতিহ্য এবং জীবনের গভীর দর্শন। ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনের সবকিছুই চক্রাকারে চলে, শূন্যতা পূর্ণতায় পরিণত হবে, আবার পূর্ণতা রিক্ততায় মিশে যাবে।