নিজস্ব প্রতিবেদন : ২০১৯-এর আগস্ট মাসে নেহা শর্মা বিগ বাজারের একটি রিটেল শপ থেকে ৯৮৮১ টাকার জিনিসপত্র কেনাকাটা করেন। অনেক জিনিসপত্র থাকায় তাকে এক্সট্রা দুটি ক্যারিব্যাগ নিতে হয়েছিল। কিন্তু বিলে টাকার পরিমাণ দেখে তার চক্ষুচড়ক গাছ হয়ে যায়! কেন? মাত্র দুটি ক্যারি ব্যাগের জন্য বিগ বাজার কর্তৃপক্ষ ৪৮ টাকা বিল ধরেছেন। অর্থাৎ এক একটা ক্যারিব্যাগ পিছু ২৪ টাকা করে। চণ্ডীগড়ের সেক্টর ৩০ এর বাসিন্দা নেহা শর্মা ওই বিল দেখে তীব্র আপত্তি জানান এবং টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি করেন। কিন্তু বিগ বাজার কর্তৃপক্ষ টাকা ফিরিয়ে দেননি।
ঠিক এই একই ঘটনা ঘটে বিগ বাজারের উপর ক্রেতা প্রীতি কালিয়ার সাথে। তার কাছে বিগ বাজার কর্তৃপক্ষ এক একটি ক্যারি ব্যাগের দরুন ১২ টাকা করে নেয়। দুটি ক্যারি ব্যাগের দরুন মোট ২৪ টাকা নেয়।
এরপর দুজনে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেন। কিন্তু টাকা ফেরত না পাওয়ায় দুজনেই ওই রিটেল শপের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা করে ডিস্ট্রিক্ট কনজিউমার কমিশনে অভিযোগ জানান। এই অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশন তদন্ত শুরু করেন। আর তার ফলস্বরূপ আজ অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার জন্য বিগবাজার কর্তৃপক্ষের আর্থিক জরিমানা ধার্য হলো।
কমিশনের তদন্ত চলাকালীন বিগ বাজারের ঐ রিটেল শপটির দাবি ছিল, “তারা ক্যারি ব্যাগের জন্য সঠিক দামই ধার্য করেছেন। ক্যারি ব্যাগের দাম কত দিতে হবে তা লেখায় ছিল। ক্যারি ব্যাগের দাম জেনেই অভিযোগকারীরা ক্যারি ব্যাগ নিতে রাজি হন।”
বিগ বাজার কমিশনের কাছে আরও দাবি করে যে, “তারা সব সময়ই ক্রেতাদেরকে অনুরোধ করেন যে নিজেদের ব্যাগ নিয়ে আসার জন্য। পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের যাতে সচেতনতা তৈরি হয়, এর জন্যই তারা এই ব্যবসায়িক নীতি অবলম্বন করেছেন। তাই ক্রেতারা যখন নিজের ব্যাগ না নিয়ে আসেন এবং দোকান থেকে ক্যারি ব্যাগ চান তখন অতিরিক্ত দাম ধার্য করা হয়। ক্রেতাদেরকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করতেই এই পদক্ষেপ।”
কনজিউমার কমিশনার দুই পক্ষেরই বক্তব্য শোনেন। তারপর তারা একটি সিদ্ধান্তে আসেন। তারা অনেক বিচার-বিবেচনার পর জানান যে, “বিগ বাজার কর্তৃপক্ষ যা দাবি করছেন তার নির্দেশিকা থাকার গ্রহণযোগ্য কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি বিগ বাজার কর্তৃপক্ষ। ক্যারি ব্যাগের অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার জন্য কোন নির্দেশিকার উল্লেখ পাওয়া যায়নি। এটা অনৈতিক ব্যবসা। এই ভাবে ক্রেতাদের উপর ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত দাম চাপিয়ে দেওয়া যায় না।”
এরপর কমিশন বিগ বাজারকে ওই ক্যারিব্যাগগুলির দাম বাবদ টাকা অভিযোগকারীদের ফেরত দিতে বলেন। দীর্ঘদিন ধরে মামলার কারণে গ্রাহকদের যে হয়রানি হয়েছে সেই হয়রানির জন্য দুই গ্রাহককে ১০০ টাকা করে দিতে বলেন। এছাড়া মামলার খরচ হিসেবে দুজন অভিযোগকারিণীকে ১১০০ টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই বিষয়ের জন্য কমিশন মোট তিনটি মামলা দায়ের করে। সেই তিনটি মামলার জন্য টাকা ধার্য করা হয়েছে জরিমানা বাবদ। প্রতিটি অভিযোগের জন্য ৫০০০ টাকা করে কনজিউমার লিগাল এইড অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিগ বাজারের ওই রিটেল শপকে। সব মিলিয়ে বিগ বাজারের ওই রিটেল শপের আর্থিক জরিমানার পরিমাণ ১৮,০০০ টাকা!!!
এই আর্থিক জরিমানার পরিমাণ দেখার পর অনেক ব্যবসায়ীই হয়তো অনৈতিকতা ছেড়ে সততার পথ অবলম্বন করবেন। সাথে সাথে এই মামলা এক অর্থে মানবতারই জয়।অসাধুতা সাময়িক লাভ পেলেও পরিনামে তার ফল যে খারাপই হয় তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল।