প্রসূন কান্তি দাসঃ ভারতে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে দুটি ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় হিন্দি এবং ইংরেজি। কিন্তু ভারতে প্রায় কয়েকশো ভাষা প্রচলিত রয়েছে তার মধ্যে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে মাত্র ২২টি ভাষা। যদিও তার মধ্যে বাংলা ভাষা রয়েছে। কিন্তু তারপরও বাংলা ভাষাভাষীদের কে অনেকেই একটু নিচু চোখে দেখেন। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে যেহেতু ইংরেজি ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় তাই অনেকের মধ্যে বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এখন থেকে আর অবহেলা করলে চলবে না। চাকরি করতে হলে বাংলা ভাষা জানতেই হবে। এই ব্যবস্থায় করে দিল রাজ্য সরকার (State Govt Recruitment)।
এখন থেকে রাজ্যে চাকরি পেতে গেলে শুধুমাত্র ইংরেজি বা হিন্দি ভাষায় দক্ষ হলেই হবে না। সমানভাবে দক্ষ হতে হবে বাংলা ভাষাতেও। এই বিষয়ে বড়ো পদক্ষেপ নিল রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তর। এখন থেকে রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তরে যোগদান (State Govt Recruitment) করার জন্য লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে ৮৫ নম্বরের মধ্যে ১০ নম্বরের প্রশ্ন আসবে বাংলা ভাষা থেকে। এতদিন এই ভাষাটি অপশানাল হিসেবে আসতো পরীক্ষায়। কিন্তু অনেকদিন ধরেই বাংলাপক্ষ লড়াই চালাচ্ছিল, বিদ্যুৎ দপ্তরের পরীক্ষায় বাংলা ভাষাকে বাধ্যতামূলক করার দাবিতে। সম্প্রতি সেই দাবি মেনে নিল বিদ্যুৎ দপ্তর। এখন থেকে বাধ্যতামূলকভাবেই বাংলায় পরীক্ষা দিতে হবে চাকরিপ্রার্থীদের। বাংলা পক্ষ এই বিষয়টিকে নিজেদের জয় বলেই মনে করছে। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে ৮৫ নাম্বারের পরীক্ষায় মাত্র ১০ নম্বরের বাংলা পরীক্ষা। এতে আর এমনকি হবে? কিন্তু বিষয়টি তেমন সহজ নয়। আপনি চাইলেই ১০ নম্বরের এই পরীক্ষা বাদ দিয়ে অন্যান্য বিষয়ের উপর ভিত্তি করে পরীক্ষায় পাশ করতে পারবেন না। কারণ ৮৫ নম্বরের মধ্যে ১০ নম্বর বাংলা ভাষার জন্য বরাদ্দ করার পাশাপাশি, ১০ নম্বরের মধ্যে অন্তত ৪ নম্বর পেয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কোন পরীক্ষার্থী যদি ভেবে থাকেন রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ দপ্তরে কর্মী নিয়োগের (State Govt Recruitment) এই পরীক্ষায় ৮৫ এর মধ্যে ১০ নম্বর বাদ দিয়ে বাকি ৭৫ নম্বরের উপর ভিত্তি করে পাশ করবেন তা হবে না। ১০ নম্বরের মধ্যে ৪ নম্বর পেতেই হবে যে কোন পরীক্ষার্থীকে। সিলেকশনের সময়ও দেখা হবে বাংলা বিষয়ে কে কত বেশি নম্বর পেয়েছে। যদি দেখা যায় ৮৫ তে দুজন পরীক্ষার্থী একই নম্বর পেয়েছেন তাহলে যে পরীক্ষার্থী বাংলায় বেশি নম্বর পাবেন তাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ দপ্তরের পরীক্ষায় বাংলা ভাষাকে যুক্ত করার দাবিতে অনেকদিন ধরেই লড়াই করছিল বাংলা পক্ষ। এই দাবি কার্যকর করার জন্য একাধিকবার অভিযানও চালানো হয়েছে প্রধান কার্যালয় সহ অন্যান্য জেলা অফিসগুলিতেও। অভিযানে যুক্ত ছিল চাকরিপ্রার্থীসহ বাংলা পক্ষের সমস্ত সদস্যরা।
রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মী নিয়োগের (State Govt Recruitment) পরীক্ষায় বাংলা ভাষাকে যুক্ত করা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ সদস্যদের মধ্যে মন্ত্রী, আমলা এমনকি প্রশাসনিক স্তরের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যেও আলোচনা সভা বসানো হয়েছিল। সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ দপ্তরের পরীক্ষায় বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা করার পর নিজেদের লড়াইয়ে কিছুটা সাফল্য পাবার আশায় উচ্ছ্বসিত বাংলা পক্ষ। তাদের মতে এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিদ্যুৎ দপ্তরে চাকরি কিছুটা হলেও নিশ্চিত করা সম্ভব হলো।
রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তর এমনই একটা প্রতিষ্ঠান যেখানে নিয়োগ (State Govt Recruitment) সংক্রান্ত স্বচ্ছতা কিছুটা হলেও এখনো বজায় রয়েছে। প্রায় প্রতি বছরই কোন প্রকার বাধা ছাড়াই নিয়োগ প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন করা সম্ভব হয় এই বিভাগে। বেতনের দিক থেকেও এই বিভাগ বেশ ভালো। কিন্তু এই পরীক্ষায় বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক না হওয়ায় সমস্যায় পড়ছিল বাঙালিরা। কারণ, রাজ্যের বাইরে থেকেও চাকরিপ্রার্থীরা এসে এই পরীক্ষার মাধ্যমে চাকরি পাচ্ছিলেন রাজ্যে। এর বিরুদ্ধেই চলছিল লড়াই। সম্প্রতি বিদ্যুৎ দপ্তরের পরীক্ষায় বাংলা ভাষাকে বাধ্যতামূলক করার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় অথবা ফোন করে বাংলা পক্ষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অনেক বাঙালি চাকরিপ্রার্থী। বাংলা পক্ষের সাধারণ সম্পাদক কৌশিক মাইতি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে খবরটি প্রকাশ করে লিখেছেন, এই ঘোষণার মাধ্যমে বাঙালি চাকরিপ্রার্থীদের কিছুটা হলেও সুবিধা হবে। এই জয় বাংলা পক্ষের, এই জয় বাংলার চাকরিপ্রার্থীদের।