প্রসূন কান্তি দাস: ২০২৪ সালের বাণিজ্য সম্মেলন আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে। প্রস্তুতি নেবার সময় পাওয়া যায়নি। এটাই একমাত্র কারণ। কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে উত্তেজনা। বিরোধীপক্ষ রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তাদের দাবি পশ্চিমবঙ্গের শিল্প উন্নয়ন হচ্ছে না। আর তাই জানে বাণিজ্য সম্মেলন করা সম্ভব নয়। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য সরকার কি রাজ্যের শিল্পের বিনিয়োগ টানতে অনুৎসাহী হয়ে পড়ছে? কিন্তু এই সন্দেহ কিন্তু একেবারেই অমূলক। এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। শিল্পে বিশাল সাফল্য পশ্চিমবঙ্গের! বিনিয়োগের পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা (Big Investment)।
বাণিজ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে পেশ করা তথ্য অনুযায়ী অবাক করা খবর রয়েছে পশ্চিমবঙ্গবাসীর জন্য। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার শিল্পে বিনিয়োগ টানতে অনুৎসাহী কিনা? কিন্তু সমীক্ষা বলছে ২০২৪ শে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন শিল্প খাতে তা গত এক বছরের মধ্যে করা হয়নি। গত বছর যে পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছিল তার থেকে অনেক বেশি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এই দুই মাসের মধ্যে। সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যের বিভিন্ন শিল্প খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৫৩০ কোটি টাকা। যা রীতিমত অবাক করে দিয়েছে সকলকেই। শুধুমাত্র নামিদামি সংস্থার মাধ্যমেই রাজ্যে এই বিপুল পরিমাণ অর্থের লগ্নি (Big Investment) করা হয়েছে।
বাংলা থেকে নাকি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বড় কোন সংস্থা নাকি বাংলার শিল্প খাতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী নয়। কিন্তু এ সমস্ত তথ্যকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল। এলাকার আর্থসামাজিক উন্নতি নির্ভর করে বিভিন্ন শিল্প খাতে বিনিয়োগ করা অর্থের উপর। বিনিয়োগ মানে নতুন কর্মসংস্থান। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের উপরেই আশা রাখেন বেশিরভাগ রাজ্যবাসি। তাই বিনিয়োগ হচ্ছে না ভেবে হিচি করে যে হতাশার সৃষ্টি করা হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে তা এক নিমিষে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে রাজ্যের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি। বাংলার মুখ উজ্জ্বল করার জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগের (Big Investment) এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন ? Ayushman Bharat: বাংলায় চালু করতেই হবে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প, বিশাল ফাঁদে ফেলে দিল রাজ্যকে
সমীক্ষা বলছে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে সব থেকে বেশি পরিমাণ বিনিয়োগ (Big Investment( হয়েছে রাজ্যে। জানুয়ারি মাসে বিনিয়োগ করা হয়েছিল ১৬,২৬১ কোটি টাকা। যে সমস্ত শিল্পে এই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে সেই ক্ষেত্রগুলিতে রয়েছে ব্যাপক পরিমাণে কর্মসংস্থানের সুযোগ। এই মুহূর্তে শূন্য পদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮৯১ টি। যা শীঘ্রই পূরণ করা হবে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ ৪৮৯১ জন কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতে চলেছে। শিল্পের কোন খাতে কত টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে? এবং কোন খাতে কতজন করে কর্মী নিয়োগ করা হতে পারে? সে সম্পর্কে একটি ধারনা পাওয়া গেছে সমীক্ষার এই ফলাফল থেকে। শিল্পে যে সমস্ত খাতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো স্টিল কাস্টিং, স্টিল প্রসেসিং, রেলের বগি, আয়রন পাইপ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্সুলেশন, ডাকটাইল, পোষাক ইত্যাদি।
২০২৩ সালে জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারি মাসে বিনিয়োগ হয়েছিল মাত্র ১২২৫ কোটি টাকা। আর ২০২৪ সালে জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। যা ২০২৩ সালে গোটা বছর ধরে বিনিয়োগ করা হয়নি। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই বিনিয়োগ কিন্তু ক্ষুদ্র শিল্পে করা হয়নি, করা হয়েছে বৃহৎ শিল্পে। আর বৃহৎ শিল্পে বিনিয়োগ মানেই খুশির খবর। বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ, উন্নত হবে আর্থিক পরিস্থিতি। বিশেষজ্ঞদের মতে এই বিনিয়োগের সাথে যদি ক্ষুদ্র শিল্পের বিনিয়োগও যুক্ত করে দেওয়া হয় তাহলে বিনিয়োগের পরিমাণ আরো অনেকটা বেড়ে যাবে এবং কর্মসংস্থানের উপযুক্ত শূন্য পদের সংখ্যাও। তাই রাজ্যে বিনিয়োগ হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা একেবারেই অনর্থক। রাজ্যে বিনিয়োগ হচ্ছে এবং তা ধারনার চেয়েও অনেক বড় আকারেই (Big Investment) হচ্ছে।