নিজস্ব প্রতিবেদন : পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার আগে রাজনীতিতে সবথেকে বড় পাশা বদল ঘটে গেল বুধবার। এদিন কলকাতায় একটি অভিজাত হোটেলে বসে সাংবাদিক বৈঠক করে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সুপ্রিমো বিমল গুরুং ঘোষণা করে দিলেন NDA ছাড়ার। পাশাপাশি তিনি জানালেন একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বদ্ধ হয়ে লড়াই করবেন।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সুপ্রিমো বিমল গুরুং গত তিন বছর ধরে পুলিশের খাতায় ফেরার ছিলেন। শুধু ফেরার নয়, তার বিরুদ্ধে ইউপিএ মামলায় হন্যে হয়ে খুঁজছিলো পুলিশ। তার নাম ছিল সাব-ইন্সপেক্টর অমিতাভ মালিক খুনের তালিকায়। কিন্তু এযাবৎ কখনোই তিনি পুলিশের হাতে আসেননি। হঠাৎ বুধবার এই ফেরার হওয়া লোকটি বেহাল তবিয়তে কলকাতায়। যার পর থেকেই শুরু হয় জল্পনা। অবশেষে সেই জল্পনার সমাপ্তি ঘটে সন্ধ্যায়।
একাধিক মামলায় এই নেতা যখন ফেরার ছিলেন তখন বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছিল তাকে আশ্রয় দিয়েছে বিজেপি। যদিও লোকসভা নির্বাচনের সময় তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তবে প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও দার্জিলিংয়ের বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তের উপর তার পূর্ণ সমর্থন ছিল এবং তা ছিল প্রত্যক্ষভাবে তা অনস্বীকার্য। তবে এই দিন তার মুখেই বিজেপির তীব্র সমালোচনা শোনা গেল।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বিমল গুরুং জানান, “লোকসভা নির্বাচনে ১২ বছর ধরে বিজেপিকে সমর্থন করে এসেছি। কিন্তু আমরা কি পেয়েছি? গোর্খাল্যান্ডের স্থায়ী সমাধানের জন্য নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ সকলেই আশ্বাস দিয়েছিলেন। উনাদের সাথে দেখা করলে শুধু বলেন দেখছি। গত ৬ বছরে তো কিছুই হয়নি। বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালো, তিনি আমাদের কথা শুনে ছিলেন।”
বিমল গুরুংয়ের এমন ঘোষণার পরেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন দার্জিলিংয়ে তৃণমূলের মাটি শক্ত হলো। কারণ দার্জিলিংয়ের রাজনীতি বিমল গুরুংয়ের ইশারাতেই চলে। যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দাবি করেছেন, ক্ষমতার লোভে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন বিমল গুরুং। আমরা গোর্খাল্যান্ডের দাবি সমর্থন করিনি, তাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম। রাজনীতিতে পরিবর্তন হয়েই থাকে। আমরাও দেখবো।
তবে বিমল গুরুংয়ের হঠাৎ তৃণমূলের সাথে জোট বাঁধার কারণ সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ অন্য দাবি করছেন। তাদের বক্তব্য, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থনে বিজেপি দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে জিতলেও সেই জায়গায় নিজেদের আধিপত্য কায়েম করছে ধীরে ধীরে। আর এই আধিপত্য কায়েম হলে বিপদে পড়বেন বিমল গুরুং তথা রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। যে কারণে বিমল গুরুঙ্গও চাইছেন দার্জিলিংয়ের তার আধিপত্য বজায় থাকুক। অন্যদিকে তৃণমূলও চাইছে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দার্জিলিং থেকে বিজেপিকে উৎখাত করতে এবং পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থী যেন জয়যুক্ত হয়ে সংসদে যান।