লকডাউনে গৃহবন্দী ৩ বছরের শিশুর জন্মদিন পালন, অভিনব উদ্যোগ বীরভূম পুলিশের

Madhab Das

Updated on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে চলছে লকডাউন। লকডাউন চলছে ভারতেও। গৃহবন্দী গ্রাম থেকে শহরের মানুষ। গৃহবন্দী খুদে শিশুরাও। খেলাধুলা সবকিছু বাড়ির মধ্যেই, কখনো আবার জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখা বাইরের জগৎ। ঠিক এরকমই এক শিশুর জন্মদিন আজ। বাড়ির গুরুজনদের কথা বার্তায় সে আগাম টের পেয়েছিল জন্মদিনে তাকে এই ভাবেই গৃহবন্দী হয়ে থাকতে হবে। তবে এমনটা হলো না, ওই শিশুর জন্মদিন পালন করে মুখে হাসি ফোটালো বীরভূম জেলা পুলিশ।

Advertisements

Advertisements

ঘটনার সূত্রপাত গতকাল অর্থাৎ জন্মদিনের ঠিক আগের দিন। বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের মহিষা আদিবাসী পাড়ার লক্ষ্মীশ্বর সরেন নামে তিন বছরের ওই খুদে শিশু বাড়িতে একলা বসে ছিল। বাবা গেছেন মাঠে কাজ করতে আর মা বাড়ির কাজ সারতে ব্যস্ত। এমন সময় বীরভূম পুলিশের মাতৃস্নেহ দলের সদস্যরা লক্ষীর বিষয়ে জানার পাশাপাশি বাড়ির প্রত্যেক সদস্যকে মাস্ক, স্যানিটাইজার অথবা সাবান ব্যবহার করতে বলেন। আর সেসময় লক্ষ্মী সামনে আসতেই জানতে চাওয়া হয় তার বয়স। লক্ষীর মা জানান, রবিবার সে তিন বছরে পা দেবে। কিন্তু লক্ষ্মীর মা আরও জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে জন্মদিন পালন করার উপায় নেই। চারদিকে লকডাউন, হাতের কাজের অভাবে টাকা-পয়সাও কম, তারপর আবার নানান নিরাপত্তাজনিত বিধি নিষেধ। লক্ষ্মী মায়ের কথা শুনেই বুঝতে পারে এ বছর আর তার জন্মদিন পালন হচ্ছে না।

Advertisements

লক্ষ্মী নামে ওই আদিবাসী শিশুর সম্পর্কে সমস্ত কিছু জানার পর বীরভূম পুলিশের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন রবিবার তারা ওই শিশুর বাড়িতে গিয়ে জন্মদিন পালন করবেন। সিদ্ধান্ত মত হঠাৎ রবিবার ঐ শিশুর বাড়িতে উপস্থিত হন গতকালকের পুলিশ দিদিরাই। তবে খালি হাতে নয়, পুলিশ দিদিদের হাতে একটা বাক্স আর অন্যান্য বেশকিছু জিনিসপত্র। যা দেখে ওই ছোট্ট শিশুর কৌতুহল হয়। সে পুলিশদের জিজ্ঞাসা করে, ‘এটা কি গো?’

আর তার উত্তরে পুলিশ দিদিরা জানান, “এটা হল কেক, তুমি কেক কাটবে। আরও অনেক সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য।” একথা শুনেই লক্ষ্মী বাড়ির বাইরে এসে দেখতে পাই মুখে মাস্ক পরা প্রিয় কার্টুনের দুটি চরিত্র মোটু আর পাতলু দাঁড়িয়ে আছে। আর এসব দেখেই লক্ষ্মী তখন আনন্দে আত্মহারা।

লক্ষ্মী হঠাৎ করে এসব দেখে গলা উঁচিয়ে তাদের বাড়িতে ডাকে। তবে তারা ইশারায় বুঝিয়ে দেয় ঘরে ঢুকবে না। তাই ভাই-বোনকে বাইরে নিয়ে এসে কেক কাটা হয় লক্ষ্মীর জন্মদিনের।

আর জন্মদিন পালনের ক্ষেত্রেও বর্তমান পরিস্থিতিকে খেয়াল রেখে মেনে চলা হয় একগুচ্ছ নিয়ম। মুখে মাস্ক, মাথায় টুপি, স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা, তারপর কেক কাটা। পুলিশ দিদিরা নিজেদের হাতে খাইয়ে দিল মিষ্টি আর পায়েস। সবশেষে বিদায় বেলায় মোটু দা আর পাতলু দার দিকে তাকিয়ে লক্ষ্মী বলে, “ভাইরাস চলে গেলে তোমরা আবার এসো। আমরা তখন একসাথে ঘুরতে যাব।” আর লক্ষ্মীর কথাই এটুকু বোঝা যায়, সে ছোট হলেও সব কিছুই বোঝে।

Advertisements