প্রতীম মস্করা : ফেসবুকে আলাপ, তারপর ফোনালাপ। ধীরে ধীরে গৃহবধুর সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় এক যুবকের। কয়েক মাস এইভাবে প্রেম চলার পর গৃহবধূকে প্রলোভন দেওয়া হয় বিয়ের। আর এই ভাবেই ফাঁসিয়ে ওই গৃহবধূকে চালান করা হয় ভিন রাজ্যে। প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বই এবং পরে সুরাত। আর তারপরেই ওই গৃহবধূর প্রেমিকার আসল চেহারা সামনে আসে।
প্রেমের জলে ফাঁসিয়ে ভিন রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার পর অভিযুক্ত ওই যুবক ওই গৃহবধূর বাড়িতে ফোন করে ৬ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। অন্যথায় ওই গৃহবধূকে অন্য কোথাও (দুবাই) বিক্রি করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। মুক্তিপণের এই ফোন পাওয়ার পরেই ওই গৃহবধূর বাড়ির লোকজন নলহাটি থানার অভিযোগ দায়ের করেন এবং নলহাটি থানার পুলিশ মোবাইল টাওয়ারের সূত্র ধরে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। বৃহস্পতিবার তাকে রামপুরহাট আদালতে তোলা হয় এবং পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এমন ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের নলহাটি থানার অন্তর্গত পাইকপাড়া গ্রামে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ওই গৃহবধূর বিয়ে হয় নলহাটিতে এক কৃষক পরিবারে। পরে বছর বাইশের ওই গৃহবধূর নেপালের জলেশ্বর থানার হালখড়ির রাকেশ কুমার পাণ্ডে এক যুবকের সাথে তার ফেসবুকে পরিচয় হয় এবং তাদের দুজনের ফোনালাপের মধ্যে প্রেম জমে ওঠে। যে ঘটনা ওই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঘুণাক্ষরেও টের পাননি।
এরপর হঠাৎ গত মে মাসের ২৩ তারিখ ওই গৃহবধূ নিখোঁজ হয়ে যান। পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি করেও কোনো হদিস মেলেনি। তারপর পরিবারের সদস্যরা নলহাটি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পুলিশের তদন্ত চলাকালীন হঠাৎ দিন কয়েক আগে ওই গৃহবধূর বাবার ফোন নম্বরে ফোন আসে ওই বিপুল পরিমাণ টাকা দাবি করে। ফোন পেয়ে ওই গৃহবধূর বাবা পুনরায় নলহাটি থানায় বিষয়টি জানান। পুলিশ ঘটনার বিষয়ে জানতে পেরে পুনরায় নতুনভাবে তদন্ত শুরু করে।
মোবাইল নম্বরের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে বীরভূম পুলিশ জানতে পারে ওই যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল সেটি সুরাতের শচীন পুলিশ স্টেশন এলাকার। এরপর বীরভূম পুলিশের একটি বিশেষ দল ওই এলাকায় যায় এবং সেখানকার পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয় এক বস্তি থেকে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে। ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করার পাশাপাশি অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করার পর বীরভূমের নলহাটি থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। ভিন রাজ্যে এইভাবে চালান হওয়া মহিলাকে উদ্ধার করে যেমন বীরভূম জেলার পুলিশ অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে ঠিক তেমনি পুনরায় ঘরের মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুশি ওই গৃহবধূর বাড়ির সদস্যরা।