১ টাকায় আজীবন দেখেছেন রোগী, জানুন পদ্মশ্রী ডাঃ সুশোভন ব্যানার্জির অজানা কাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদন : ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর বীরভূমের কোন আলো করে এসেছিলেন সুশোভন ব্যানার্জি। পরবর্তীতে তিনি হয়ে ওঠেন একজন চিকিৎসক। তবে অন্যান্য চিকিৎসকদের মতো তার কাছে চিকিৎসা করানোর জন্য গাঁটের কড়ি খরচ করতে হত না রোগীদের। মাত্র ১ টাকায় তিনি রোগী দেখতেন। ৫৭ বছর ধরে এইভাবে রোগী দেখার কারণে তার নামই হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘১ টাকার ডাক্তার’।

বোলপুরের হরগৌরিতলায় বছরের পর বছর ধরে তিনি এই ভাবেই মাত্র এক টাকায় রোগী দেখতেন। যে কারণে তিনি দুঃস্থ দরিদ্র গরিব মানুষদের কাছে ভগবান রূপে পুজিত হতেন। এই স্বনামধন্য গরিবের ডাক্তার মঙ্গলবার সকলকে ছেড়ে চলে গেলেন। কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় ১৫-২০ দিন ধরে তিনি কলকাতার নর্থ সিটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তবে সেই হাসপাতাল থেকে আর সুস্থ হয়ে ফেরা হলো না তার।

এই ডাঃ সুশোভন ব্যানার্জীর অনেক কাহিনী রয়েছে যা অনেকেই জানেন না। তিনি শুধু এক টাকায় চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করতেন এমনটা নয়। এর পাশাপাশি তার কোনদিন রোগী দেখার ক্ষেত্রে কলম থামেনি। যতক্ষণ তার শরীর টানত ততক্ষণ তিনি পরিষেবা দিয়ে যেতেন। সেই সকল মুহূর্ত এখন স্মৃতি হয়ে রয়ে গেল।

এনআরএস হাসপাতালে একবার চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় রাজ্য জুড়ে চিকিৎসকেরা ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসক সুশোভন ব্যানার্জি তার চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ করেননি। তিনি ধর্মঘটের সেই দিনগুলিতেও সমান ভাবে রোগী দেখেছিলেন এবং জানিয়েছিলেন, তার প্রতিবাদ কলম চালিয়েই। রোগীদের পরিষেবা দিয়েই তার প্রতিবাদ।

একইভাবে করোনাকালে যখন অধিকাংশ চিকিৎসক তাদের প্রাইভেট ক্লিনিকে পরিসেবা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন সেই সময়ও কিন্তু সমানভাবে পরিষেবা প্রদান করতে দেখা গিয়েছিল এই চিকিৎসককে। তখনো করোনার ভয়ে থেমে যায়নি তার কলম। এমনকি তিনি যখন কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন, সপ্তাহে সপ্তাহে চলছে ডায়ালাইসিস, সেই সময়ও তার শরীর যতক্ষণ টেনেছে তিনি রোগী দেখেছেন।

স্বনামধন্য এই চিকিৎসক ২০২১ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত হন। পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত হওয়ার পাশাপাশি তিনি গিনেস বুক অব রেকর্ডস-এ নাম তোলার জন্য দৌড়েছিলেন। যদিও সেক্ষেত্রে তিনি সামান্য কিছু সংখ্যার জন্য এই শিরোপা থেকে দূরে সরে যান। তবে যেভাবে তিনি দিনের পর দিন গরিব মানুষদের জন্য পরিষেবা দিয়ে গেছেন তা কখনো ভোলার নয়।