বিধায়কদের বেতন শুনে ‘থ’ চন্দনা বাউড়ি, কী করবেন খুঁজেই পাচ্ছেন না

Shyamali Das

Published on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল বিজেপি তাদের দুই দুঃস্থ পরিবারের কর্মী বাঁকুড়ার শালতোড়ার চন্দনা বাউড়ি এবং পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রামের কলিতা মাঝিকে প্রার্থী করে। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ পরিবারের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় হাসিল করেন চন্দনা বাউড়ি। যার পরে তিনি বিধায়ক হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তবে শপথ গ্রহণের পর চন্দনা বিধায়কদের বেতন শুনে ‘থ’। এই এত্ত টাকায় কি করবেন তাতেই এখন তার মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে।

Advertisements
চন্দনা বাউড়ি

প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পর তিনি যখন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন সেই সময় যে হলফনামা পেশ করেছিলেন তাতে উল্লেখ ছিল তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র ৩২ হাজার টাকার মত। সম্পত্তি বলতে ছিল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রয়েছে মাত্র ৬ হাজার ৩৩৫ টাকা। আর বাকি সম্পত্তি ৩টি ছাগল, ৩টি গরু এবং একটি কুঁড়েঘর। স্বামীর অ্যাকাউন্টেও থাকা অর্থের পরিমাণ ১,৫৬১ টাকা। তাঁর স্বামীর দৈনিক আয় সর্বাধিক ৪০০ টাকা। আর এই চন্দনাই রাজ্যের দরিদ্র বিধায়কদের মধ্যে অন্যতম।

Advertisements

বিধায়ক হিসেবে শপথ গ্রহণ করার পরেও চন্দনা প্রথমদিকে জানতেনই না তিনি কত টাকা বেতন পাবেন। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ফোনালাপের সময় তিনি তা জানতে পারেন। আর তা শুনেই তিনি ‘থ’ হয়ে যান। একজন পশ্চিমবঙ্গের বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর বিধায়করা বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা বাবদ আনুমানিক ৮২ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। আর এই অঙ্কের টাকা চন্দনা বাউরিকে বলা হলেই তার মুখ থেকে শোনা যায় একটি কথায়, ‘এত্ত টাকা’।

Advertisements

তবে এর পরেই যখন ওই বিধায়ককে প্রশ্ন করা হয় তাহলে আপনি একটা গাড়ী কিনে নিতে পারেন? সেই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য চন্দনা জানান, ‘সে অনেক দাম। দরকার নেই। তাছাড়া আমার বাড়ি ঘরও তো ঠিকঠাক নেই। আমার স্বামী আমাকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যান আর আমার নিরাপত্তারক্ষীরা আমাদের কার্যকর্তাদের মোটরসাইকেলে চেপে যাতায়াত করেন।’

বাঁকুড়ার শালতোড়ার চন্দনা বাউড়ি তার নিরাপত্তার জন্য চারজন কেন্দ্রীয় বাহিনী পেয়েছেন। তবে তাদের বাড়িতে ওই সকল কেন্দ্রীয় বাহিনীদের রাখার জন্য জায়গা না থাকায় তাদের নিকটবর্তী একটি নির্মীয়মান বাড়িতে থাকার বন্দোবস্ত করা হয়। এই বাড়িটিতে আবার জানলা, দরজা কিছুই ছিল না। তবে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন চন্দনা নিজেই।

জানা গিয়েছে, ভোটের আগে নিজের অর্ধনির্মিত প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়িতে লাগানোর জন্য চন্দনা দুটি জানলা এবং একটি দরজা কিনেছিলেন। কিন্তু আচমকা দরকার হয়ে পড়ায় তিনি এবং তাঁর স্বামী ওই সকল দরজা জানলা ওই সেনা জওয়ানদের জন্য থাকার বন্দোবস্ত করার জায়গায় লাগিয়ে দেন। এর পাশাপাশি একাধিকবার চন্দনা বাউড়ি এবং তার শাশুড়ি দুজনে মিলে তাদের নিরাপত্তায় থাকা জাওয়ানদের রান্না করে খাইয়েছেন।

চন্দনা বাউড়ির বাড়িতে এখনো পর্যন্ত কোনো টিভি অথবা মনোরঞ্জনের মতো কোনো জিনিস নেই। এই প্রসঙ্গে টিভি কেনার প্রশ্ন উঠলে চন্দনা জানান, ‘ভোটের আগে একটা ফোন কিনেছি। তাতেই টিভি দেখি আর খবর দেখি।’ অর্থাৎ একজন বিধায়ক হওয়ার পরেও চন্দনা বাউড়ি মাসে মাসে এত টাকা বেতন পাবে শুনেও সেটা নিয়ে কী করবেন তা তিনি বুঝতেই পারছেন না। তবে তিনি প্রথম থেকে এখনো পর্যন্ত একটাই কথা বলে আসছেন, ‘যা করবো, মানুষের জন্য করবো’।

Advertisements