কলকাতা : আরজি কর কাণ্ড আর সেই কাণ্ডের জেরে ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযান। নবান্ন অভিযানে ছাত্র সমাজের উপর পুলিশের লাঠি চার্জ, কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানো, জল কামানে প্রতিরোধ গড়ে তোলা ইত্যাদির প্রতিবাদে বুধবার বিজেপির তরফ থেকে বাংলা বনধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। বিজেপির তরফ থেকে ডাক দেওয়া এই বাংলা বনধের প্রভাব (Bangla Bandh Effect) বাংলায় কতটা পড়ল তা নিয়ে এখন আলোচনা।
সরকারে আসার আগে পর্যন্ত তৃণমূল রাজ্যে কোন কিছু ঘটনা ঘটলেই বনধ ডাকতো। তবে সরকারে এসে তাদের ভাবমূর্তি পুরোপুরি ভাবে বদলে গিয়েছে। সরকারে আসার পর তারা সম্পূর্ণভাবে বনধ বিরোধী হয়েছে। নিজেরা তো বনধ ডাকেই না, আবার বিরোধী কোন রাজনৈতিক দল বা সংগঠন বনধ থাকলে তা দমাতে উঠে পড়ে নেমে পড়ে। যেমনটা বুধবার বিজেপির ডাকা বনধের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে।
বুধবার বিজেপির ডাকা বনধকে বিফল করতে প্রশাসনিকভাবে যেমন তৎপরতা ছিল, সেই রকমই রাজনৈতিকভাবেও শাসক দল তৃণমূলের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজ্যের প্রান্তে প্রান্তে পুলিশ থেকে শুরু করে তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের মিছিল বনধের দিনে বিজেপিকে সুযোগ করতে দেয়নি বললেই চলে। তবে এসবের মধ্যেও কিন্তু বনধের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে রেলে।
বনধের দিন রেল পরিষেবাকে স্তব্ধ করতে বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি কর্মী সমর্থকদের তরফ থেকে রেল লাইনের শুয়ে পড়তে দেখা যায়। আর এসবের কারণে বিভিন্ন জায়গায় আটকে যায় লোকাল ট্রেন। পূর্ব রেলের শিয়ালদা ও হাওড়া ডিভিশনের বিভিন্ন জায়গায় এমন ছবি ধরা পড়ে আর এসবের কারণে বুধবার দিনভর ১০০ টি লোকাল ট্রেন বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল। এছাড়াও অনেক ট্রেন নির্ধারিত সময়ের থেকে দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছেছে। তবে কলকাতায় মেট্রো রেল স্বাভাবিক ছিল বলে জানিয়েছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র।
আরও পড়ুন : Bank Close Days: সেপ্টেম্বর মাসে কোন কোন দিন বন্ধ থাকবে ব্যাঙ্ক, তালিকা দিল RBI
হাওড়া ও শিয়ালদা ডিভিশনে যে ১০০টি লোকাল ট্রেন এদিন বাতিল করা হয়েছে তার মধ্যে ৯০ টি হল শিয়ালদা ডিভিশনের আর মাত্র ১০ টি হাওড়া ডিভিশনের। রেলের যে সকল রুটে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে সেগুলি হল নামখানা, ব্যারাকপুর, রানাঘাট, বনগাঁ, চাকদহ, কল্যাণী সীমান্ত, পায়রাডাঙ্গা, মদনপুর, জিয়াগঞ্জ, বহরমপুর কোর্ট, কৃষ্ণনগর, মুড়াগাছা, বাদকুল্লা, কাশিমবাজার, বীরনগর, কালীনারায়নপুর এবং মুর্শিদাবাদ স্টেশনে।
এছাড়াও বনধ সমর্থনকারীরা রেল অবরোধ করে পঞ্চবেড়িয়া, হাবিবপুর, শান্তিপুর, বারাসত, বামনগাছি, হাবরা, বনগাঁ, মছলন্দপুর, ঠাকুরনগর, দত্তপুকুর, ভ্যাবলা, চাঁপাপুকুর এবং বসিরহাট সহ বিভিন্ন স্টেশন ও রুটে। অন্যদিকে হাওড়া ডিভিশনের হিন্দমোটর, মানকুন্ডু, হুগলি, কোন্নগর, উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, বালি, চন্দননগর, রিষড়া, কাটোয়া, সিঙ্গুর, মগরা, গুড়াপ এবং বেলুড় স্টেশনে সাময়িকভাবে স্তব্ধ হয়ে যায় রেল পরিষেবা। তবে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি নেতাকর্মীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করতেই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। বনধের সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেলের উপর পড়লেও বেলা ১১:৩৯-১২ টার পর থেকে পরিষেবা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গের কলকাতা লাগোয়া জেলাগুলিতে রেল পরিষেবার ওপর বনধের প্রভাব পড়লেও বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান পূর্ব বর্ধমান সহ আশেপাশের জেলায় কোন প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি।